লিখিত পরীক্ষার শেষ মুহূর্তের শর্টকাট প্রস্তুতি

By Aryan Ahmed- Assistant commissioner of taxes
৩৭ তম লিখিত পরীক্ষা একদম সন্নিকটে । পরীক্ষা যত এগিয়ে আসতে থাকে একটু হলেও তো দুশ্চিন্তা বাড়তে থাকে । কিন্তু পরীক্ষা নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা করা ঠিক হবেনা । লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে হলে অবশ্যই লিখার মান ভালো থাকতে হবে । একই সাথে সময়ের সঠিক ব্যবহারের দিকেও দিতে হবে বিশেষ নজর । যেকোনো পরীক্ষার প্রশ্নে আগে দেখতে হবে সেই বিষয়ে কতগুলো প্রশ্ন এসেছে , কোন প্রশ্নের নম্বর কত ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে কোন প্রশ্নের উত্তর কতটুকু লিখবেন সেটা সিদ্ধান্ত নিবেন। লিখিত পরীক্ষার প্রতিটি বিষয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন কেমন হয়েছে, প্রশ্নের ধরণ কেমন ছিল এসব জেনে একটা প্ল্যান অনুযায়ী পরীক্ষা দিতে গেলে পরীক্ষায় ভালো করাটা অনেকটা সহজ হবে । আপনি বিগত বছরের প্রতিটি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো দেখে প্রত্যেকটা বিষয়ে আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখবেন যে কোন প্রশ্ন দিয়ে আপনি উত্তর করা শুরু করবেন । আর কয় পৃষ্ঠা লিখবেন , উত্তর কত বড় লিখবেন এসব নির্ভর করে সেই প্রশ্নে নম্বর কত তার ওপর । তবে লিখিত পরীক্ষায় যেসব প্রশ্নের উত্তরে পূর্ণ নম্বর পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে যেমন গনিত, বুদ্ধিমত্তা, বাংলা ও ইংরেজি গ্রামার, যেকোনো টীকা ছোট ছোট প্রশ্নের উত্তর ইত্যাদি । এখন প্রতিটি বিষয় সময় ভাগ করে নিয়ে মোটামুটি একটা রিভিশন দিতে পারেন, এখন নতুন কিছু স্টাডি করার চেয়ে আপনার লিখার কৌশলগত দিকের প্রতি বেশি খেয়াল রাখতে হবে । গদবাধা পাতাভরা লিখার চেয়ে সুন্দর , তথ্যপূর্ণ গোছানো লিখাটা জরুরী । আপনার খাতা দেখে যেন স্পেশাল মনে হয় । এখন অল্প সময়ে যেভাবে স্টাডি করতে পারেন

১ — বাংলা বিষয়ে এর মধ্যে আশা করি মোটামুটি হলেও টুকটাক স্টাডি করেছেন । এখানে মূলত আপনাকে যেটা স্টাডি করতে হবে তাহল গ্রামার আর সাহিত্য । ভাব সম্প্রসারণ, সারমর্ম , অনুবাদ, সাহিত্য সমালোচনা , রচনা এসব বানিয়েই লিখতে হয় । বানিয়ে লিখার মধ্যে যেন রশদ থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন । বিভিন্ন ধরণের পত্র লিখার ধরণটা দেখে যাবেন । যারা আগে মোটামুটি একটু প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তাদের জন্য এখন একটু সুবিধা হবে , গ্রামার আর সাহিত্য ডাইজেস্ট টাইপ যেকোনো বই থেকে দেখে নিতে পারেন । আগে যদি সমিত্র শেখর স্যারের বই এর সাহিত্য অংশ পড়া থাকে তাহলে একটু সুবিধা হবে । বাংলায় কোন প্রশ্নের উত্তরে কতটুকু সময় ব্যয় করবেন সেটা আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখবেন ।

২ — ইংরেজিতেও সময় নিয়ে গ্রামার একটু দেখে নিন, আপনার দেখা vocabulary গুলোও একটু রিভিশন দিন, letter বা application লিখার ধরণটাও দেখে নিন । কিছু অনুবাদ চর্চা করুন যেকোনো গাইড থেকে বা যে বই থেকে আপনি স্টাডি করেছেন ।

৩ — গনিতের বিভিন্ন সূত্রগুলো একবার ঝালাই করে নিন । বিগত বছরের কিছু প্রশ্ন সমাধান করুন । যেকোনো গাইড থেকে প্রতিটা অধ্যায় ভিত্তিক সূত্র আর যে টাইপের প্রশ্ন বিগত বছরগুলোতে এসেছে সেগুলো কিছু সমাধান করুন । বুদ্ধিমত্তাও যেকোনো ডাইজেস্ট টাইপ গাইড থেকে একবেলা ৩-৪ ঘণ্টা একটানা দেখুন । মানসিক দক্ষতা আসলে সামগ্রিক প্রস্তুতির সমন্বয় । এটা নিয়ে বেশি ভাববেন না, বিগত বছরগুলোর প্রশ্নগুলোও একবার দেখতে পারেন । পরীক্ষার হলে কোন math সমাধান করতে গিয়ে করতে না পারলে মাথা গরম না করে অন্য math শুরু করুন । যাইহোক আপনাকে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। সব পারতে হবে, সবাই সব পারবে এমন নয় বিষয়টি ।

৪ — বিজ্ঞান সময় নিয়ে একটু দেখুন । যেকোনো গাইড থেকেই দেখুন । এখন আপনাকে শর্টকাট দেখতে হবে । এজন্য আগে যারা একটু details স্টাডি করেছেন তাদের জন্য লিখিত পরীক্ষায় ভালো করাটা সহজ হবে । সুযোগ পেলে অবশ্যই বিজ্ঞান প্রশ্নের উত্তরে চিত্র দিয়ে আসবেন । অনেক বেশি প্রশ্ন আসলে আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে গড়ে প্রতি প্রশ্নের উত্তরে কতটুকু সময় নিবেন । লিখিত পরীক্ষায় সময় এর সঠিক ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ । যেকোনো চিত্র দিতে HSC এর বই থেকে সাহায্য নিতে পারেন । বিজ্ঞান বিগত বছরের প্রশ্নগুলোও একবার দেখে নিন । প্রিলির সময় ভালমতো স্টাডি করা থাকলে সেটা লিখিত পরীক্ষায় অনেক সাহায্য করে । নতুন করে খুব বেশি কিছু দেখার দরকার নেই, এতদিন যা দেখেছেন সেটা ভালো করে দেখে যান ।

৫ — সাধারণ জ্ঞান ২ দিন দেখুন । বাংলাদেশ প্রসঙ্গ ২ দিন আর আন্তর্জাতিক একদিন দেখুন । সাধারণ জ্ঞান মূলত আপনাকে নিজের মত লিখতে হবে , তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আপনি কততা গুছিয়ে তথ্যবহুল করে লিখতে পারলেন সেটা । অনেকেই কিন্তু অনেক ভালো প্রস্তুতি নিয়ে গিয়ে পরীক্ষার হলে সব লিখে আসতে পারেন না । মাথা বেশি ভারী করে পরীক্ষা দিতে গেলে পরীক্ষা খারাপ হবার সম্ভাবনা বাড়ে । বেশি দুশ্চিন্তা করলেও পরীক্ষা খারাপ হবার চান্স বাড়ে। সাধারণ জ্ঞানের কিছু প্রশ্ন আসে চিরন্তন আর কিছু আসে সাময়িক ঘটনাবলী থেকে । এজন্য এখন যেকোনো ডাইজেস্ট টাইপ গাইড থেকেই দেখে নিন । গাইড থেকে আপনি ধারণা নিবেন কিন্তু লিখবেন নিজের মত । টপিক তো সীমিত তা আপনি জানেন যেমন নারী, পরিবেশ, বিশ্ব অস্থিরতা, জাতিসংঘ , সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধ , উপমহাদেশের ইতিহাস, সামাজিক উন্নয়ন, দুর্নীতি ইত্যাদি । এসব টপিক থেকে কোন ধরণের প্রশ্নের উত্তর কিভাবে লিখা শুরু করবেন তা আগে থেকেই প্ল্যান করে রাখুন ।

সংজ্ঞা নাকি কবিতার লাইন, নাকি সংবিধানের অনুচ্ছেদের উদাহরণ নাকি কোন ঘটনার উল্লেখপূর্বক লিখা শুরু করবেন তা সিদ্ধান্ত আগেই নিয়ে রাখবেন । তাহলে লিখতে সুবিধা হবে । সাধারণ জ্ঞান বেশি প্রশ্ন আসলে প্রতিটি প্রশ্নে কম সময় নিয়ে এর মাঝে বিভিন্ন reference দিয়ে গুছিয়ে লিখার চেষ্টা করবেন । সুযোগ সুবিধামত ছক, ম্যাপ, বিখ্যাত ব্যক্তির অবদান , পত্রিকার reference , বিখ্যাত বই এর reference ইত্যাদি দিতে পারেন । আন্তর্জাতিকেও তাই, সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে যেকোনো গাইড থেকে দেখে নিন, কিন্তু reference দিবেন নিজের মত । reference লিখার সময় নীল কালি ব্যবহার করতে পারেন । প্রশ্নের নম্বর অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিবেন যে কতটুকু লিখবেন । সংবিধানের উল্লেখযোগ্য অনুচ্ছেদগুলো দেখুন, হুবুহু লিখতে না পারলে অনুচ্ছেদ এর নম্বর ঠিক রেখে নিজের মত করে লিখুন, তবে খেয়াল রাখবেন আপনার লিখা যেন মূলকথা থেকে যেন বিচ্ছিন্ন না হয় ।

** এখন জাস্ট প্ল্যান করা, খুব বেশি স্টাডি করে মাথা গরম করা বা নতুন অনেক বেশি কিছু পড়তে যাওয়া এসব করা যাবেনা । প্রেশার নিবেন না খুব বেশি, তাহলে পরীক্ষা খারাপ হবার সম্ভাবনা বাড়বে । পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগে কয়েকটি কলম নিয়ে যান , পুড়নো কলম মানে কিছু কালি খরচ করা কলম হলে ভালো হয়, অনেকসময় নতুন কলমে জোরে লিখতে সমস্যা হয় । সাথে পেন্সিল, ইরেজার , স্কেল, নীল কালির কলম ইত্যাদি নিয়ে যাবেন । খাতা পাওয়ার পর ঠাণ্ডা মাথায় সবকিছু পূরণ করুন । প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়া মাত্র লিখা শুরু করতে যাবেন না , আগে ঠাণ্ডা মাথায় একবার দেখুন প্রশ্নপত্রটি , কয়টি উত্তর করতে হবে, কোন বাধ্যবাধকতা আছে কিনা দেখে নিন ভালমতো । কয়টা প্রশ্ন ভালো পারেন আর কয়টি বানিয়ে লিখতে হবে তখনই সিদ্ধান্ত নিবেন । যেটা সবচেয়ে ভালো পারবেন সেটা দিয়ে উত্তর করা করবেন ।
পরীক্ষায় সব প্রশ্ন কমন পাবেন এমনটি নয়, ৫০% স্টাডি থেকে পাবেন আর ৫০% নিজের লব্ধ জ্ঞান থেকে আপনাকে লিখে আসতে হবে । কোন কিছু না পারলে নার্ভাস হবেন না, দেখা যাবে আপনি যা পারছেন না অনেকেই তা পারছে না । কে কি উত্তর করছে , কে কেমন পরীক্ষা দিচ্ছে এসবের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল আপনি কেমন পরীক্ষা দিচ্ছেন। সব পরীক্ষা সমান ভালো দেয়া সম্ভব না, কিন্তু চেষ্টা করবেন গড়ে যেন সব পরীক্ষাই মোটামুটি ভালো হয় । কোন প্রশ্ন ছেড়ে আসার চেষ্টা করবেন না, কিছু হলেও লিখে আসবেন । ভালো প্রস্তুতি নিয়ে খারাপ পরীক্ষা না দিয়ে , খারাপ প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও ভালো পরীক্ষা দেয়ার চেষ্টা করবেন, এতে লাভ বেশি। কনফিডেন্স রাখুন নিজের ওপর । এই অল্প সময়ে প্রতিটি বিষয় মোটামুটি দেখে যাওয়ার চেষ্টা করবেন । অবশ্যই খেয়ে পরীক্ষা দিতে যাবেন , পারলে সাথে ছোট এক বোতলে গ্লুকোজ পানি , মাথাব্যথার ওষুধ আর এসিডটির ওষুধ নিয়ে যেতে পারেন, অনেককে সমস্যায় পড়তে দেখেছি তো তাই বললাম । বেশি প্রেশার নিতে যাবেন না এখন, বেশি স্টাডি করার চেয়ে প্রতিটি পরীক্ষা প্ল্যান করে দেয়ার চেষ্টা করবেন । আর কি বলবো, মাথায় আসছে না, ভালো থাকবেন সবাই, good luck guys.

Add a Comment