বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় ভাল করার কৌশল: বাংলা

ইমদাদুল হক প্লাবন , বিসিএস প্রশাসন , ৩৫তম বিসিএস


.
৩৭ তম বিসিএস এর লিখিত পরীক্ষা শুরু হতে অল্প কয়েকদিন বাকি আছে। পরীক্ষার প্রস্তুতি বিষয়ে বিভিন্ন জনের ধারণা বিভিন্ন রকম। অনেকেই মনে করেন- যা পড়াশুনা করার করে ফেলেছেন, এখন আর পড়ার কিছু নেই। আবার অনেকেই মনে করেন- আগের প্রস্তুতির চেয়ে এই শেষ সময়ের প্রস্তুতিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আসলে প্রতিটা মানুষের প্রস্তুতি নেবার পদ্ধতি একই রকম হওয়া সম্ভব নয়। আমি মনে করি প্রতিটি সময়কেই কাজে লাগাতে হবে। হাতে যে কয়েকদিন আছে তার জন্য সুন্দর একটি পরিকল্পনা করে নিলে পরীক্ষায় ভাল করার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। এখানে আমি বাংলার মোট ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নিয়ে কথা আলোচনা করব। পরবর্তিতে অন্য বিষয়ের লিখিত পরীক্ষাগুলো নিয়েও ধারাবাহিকভাবে লিখব।
বাংলার জন্য চাই- “ভাষা ও উপস্থাপনা”

আমরা চাইলে একটি প্রশ্নের উত্তর যেকোনো ভাষায়, যেকোনোভাবেই উপস্থাপন করতে পারি। কিন্তু ভাল নম্বর পাবার জন্য আপনার লেখায় কিছু বিশেষত্ব প্রয়োজন। এই বিশেষত্বগুলো বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। বাংলার কোন উত্তর দেবার সময় আপনি যদি সাধারণ গাইড বইয়ের ভাষা ব্যবহার না করে, কিছুটা সাহিত্যমান সম্পন্ন ভাষা ব্যবহার করেন, তাহলে অবশ্যই আপনার বেশি মার্ক আসবে। একজন শিক্ষক যখন খাতার প্রথমেই আপনার সুন্দর সাহিত্যের ভাষা দেখবে, তখনই আপনার সম্পর্কে একটি ভাল ধারণা তৈরি হবে। ফলে আপনি পরের প্রশ্নগুলোতেও কিছুটা করে সুবিধা পাবেন।

এবার অনেকেই ভাবছেন- আমি তো আর সাহিত্যিক না, আমি সাহিত্যের ভাষায় উত্তর লিখব কি করে? চিন্তা করবেন না, আপনাকে তো আর সত্যি সত্যি কোন সাহিত্য সৃষ্টি করতে হচ্ছে না!! আপনি শুধু একটু কষ্ট করে সাহিত্যের ভাষার ধরনটা বুঝে নেবেন। এজন্য সহজ কিছু উপায় আছে।

১. আপনি ভাল দু-একটি গ্রন্থ-সমালোচনা/ পর্যালোচনার বই নিয়ে একটু স্টাডি করলেই সাহিত্যের ভাষা সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবেন।
২. পত্রিকাতে মাঝে মাঝেই গ্রন্থ-সমালোচনা/ পর্যালোচনার ফিচার থাকে। এই ফিচারগুলো দেখতে পারেন।
৩. বেশ কিছু ভাল বাংলা ব্লগ আছে- যেখানে বুক রিভিউ নিয়ে পোস্ট দেওয়া হয়। এমন কয়েকটি ব্লগ পোস্টের সাহায্য নিতে পারেন।
৪. সাহিত্যের নিয়ে বিস্তারিত স্টাডি করার মত সময় আপনি পাবেন না। এজন্য উপরের উল্লেখ করা উৎস থেকে আপনি আপনার পছন্দের কিছু বাক্যকে আলাদা করে লিখে ফেলুন। এই কয়েকটি বাক্যের গঠন একটু মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করুন। আমি বলছি- আপনি অবশ্যই আপনার বর্তমান লেখার থেকে অনেক ভাল এবং সাহিত্যের ভাষার মত একটি আউটলাইন বের করে ফেলতে পারবেন।

উপরের বর্ণনা শুনে অনেকেই কাছে পদ্ধতিটা কঠিন মনে হলেও এজন্য আপনি মাত্র দুইদিন পরিশ্রম করলেই এটা করতে পারবেন। ভাল মার্ক পাবার জন্য এটুকু আপনাকে করতেই হবে। নিজেকে আলাদা প্রমাণ করতে না পারলে এক্সামিনার আপনাকে কেন ভাল মার্ক দেবে!!!!!!!!

ব্যাকরণের উপর জোর দিতে হবে!
ব্যাকরণ অংশে মোট ৩০ নম্বর থাকে। আর সঠিক উত্তর জানা থাকলে এই অংশে প্রায় সম্পূর্ণ মার্ক পাওয়া সম্ভব। বিগত বছরের প্রশ্ন খেয়াল করে দেখবেন- ব্যাকরণ অংশে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। কোন বাড়তি অপশন থাকে না। তাই এই অংশে ভাল করতে হলে আপনাকে ব্যাকরণের উপর জোর দিতে হবে। এজন্য বিগত বছরের প্রশ্নগুলো ভালমতো দেখে নিতে হবে। আর এরপর সিলেবাসের টপিকগুলো ধরে ধরে চর্চা করতে হবে।

কোন বই থেকে কোনটি শিখবেন?
নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ বই থেকে বেশ কিছু টপিক পেয়ে যাবেন। শব্দগঠন(নিয়ম), বাক্য গঠন(নিয়ম) ও বাক্য-শুদ্ধি এই তিনটি বিষয় এই বইতে ভাল দেওয়া আছে। এর পাশাপাশি হায়াত মাহমুদের বাংলা ব্যাকরণ বইটির সাহায্য নিতে পারেন(অথবা আপনি উচ্চ মাধ্যমিকে যে ব্যাকরণ বই পড়েছিলেন সেটা হলেও হবে)। এই বই থেকে প্রবাদ-প্রবচনের নিহিতার্থ শিখতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে পড়ার পাশাপাশি আপনার নিজের ভাষাজ্ঞানকেও কাজে লাগাতে হবে। বানানের জন্য- প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম(বাংলা একাডেমী) ও বাংলা একাডেমী বাংলা বানান অভিধান (জামিল চৌধুরী) এই দুটি থেকে শিখবেন। পাশাপাশি একটি ভাল গাইড বই থেকে বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করে ফেলবেন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বইয়ের তালিকা:

১. নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ
২. হায়াত মাহমুদের বাংলা ব্যাকরণ
৩. বাংলা একাডেমী বাংলা বানান অভিধান – জামিল চৌধুরী
৪. প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম – বাংলা একাডেমী
৫. একটি ভাল গাইড বই

ভাব-সম্প্রসারণ
এখানে ২০ নম্বর থাকে। ভাব-সম্প্রসারণ মুখস্থ করে কমন পাবার আশা করবেন না। তবে প্রচলিত ভাব-সম্প্রসারণগুলো দেখে রাখবেন। এতে আপনার লেখার জন্য ভাল ধারণা তৈরি হবে। যদি সম্পূর্ণ অপরিচিত লাইন দেওয়া হয়- তাহলে বাক্যটির মূল অর্থটি অবশ্যই বুঝতে হবে। এজন্য আপনি মূল অর্থটি সঠিকভাবে বোঝার জন্যই পাঁচ মিনিট সময় নিন। ভাল করে ভাবুন যে- বাক্যটি আসলে কোন অর্থ প্রকাশ করছে। এরপর লেখা শুরু করুন। আগে না ভেবে কোনভাবেই লেখা শুরু করবেন না। তাহলে প্রথমদিকের লাইনগুলোর সাথে পরের লাইনের সামঞ্জস্য থাকে না।

১. ভাব-সম্প্রসারণ খুব বেশি বড় বা খুব ছোট কোনটিই করা যাবে না। ৪-৬ প্যারার মধ্যে শেষ করলে ভাল।
২. লেখার মধ্যে বিভিন্ন উৎস থেকে উক্তি উল্লেখ করবেন। উদাহরণ দিতে পারলে আরও ভাল।
৩. লেখার প্রথম ও শেষ প্যারায় অবশ্যই সুন্দর ও সাহিত্য মানের ভাষা ব্যাবহার করবেন।
৪. লেখাটি শুধুমাত্র বর্ণনামূলক না হয়ে কিছুটা তথ্যভিত্তিক হলে ভাল হয়।
৫. লেখাতে দু একজন বিখ্যাত দার্শনিক বা সাহিত্যিকের নাম ব্যবহার করুন। এবং ঐ অংশটা একটু গাড় কালি দিয়ে লিখুন। এজন্য ঐ নামের উপর আলতো করে দুবার কলম ঘুরাতে পারেন। এই নাম ব্যবহার করা এবং সেটি হাইলাইট করার জন্য আপনার লেখায় ভিন্ন মাত্রা যোগ হবে।

সারমর্ম লিখতে হবে খুব কম কথায়
সারমর্মে ২০ নম্বর থাকে। ভাল একটি সারমর্ম লেখার জন্য প্রথমে পুরো অনুচ্ছেদটি কয়েকবার পড়ুন। লেখার চেয়ে পড়াতেই বেশি সময় ব্যয় করুন। অনেকেই প্রথমে ভালমতো না পরে চিন্তা করে করে লিখতে থাকেন। এটি করা যাবে না। প্রথমে কয়েকবার অনুচ্ছেদটি পড়ে মূলভাবটি বুঝে নিতে হবে। এবার অল্প কয়েকটি বাক্যে মূলভাবটি প্রকাশ করতে হবে।
১. সারমর্মের ভাষা হতে হবে সহজ সরল। এখানে কঠিন ভাষা ব্যবহার করার দরকার নেই।
২. কোনভাবেই ৫-৬ ব্যাকের বেশি লিখবেন না। ৫ ব্যাকের মধ্যে শেষ করতে পারলে ভাল।
৩. আপনার লেখা কোন লাইনই মূল অনুচ্ছেদের সাথে মিলে গেলে চলবে না।
৪. এখানে আপনি লিখবেন অল্প কয়েকটি লাইন। তাই কোনভাবেই কাটাকাটি করবেন না।

বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক প্রশ্ন
এই অংশে ৩০ নম্বর থাকে। এই অংশে অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে আপনাকে একটু বুঝে-শুনে প্ল্যান করে পড়াশুনা করতে হবে। তবে চাপ নেবার কিছু নেই। প্রথমেই আপনাকে বিগত বছরের প্রশ্নগুলো ভালমতো দেখে নিত হবে। লক্ষ্য করলে দেখবেন কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক থেকেই প্রশ্ন করা হয়। এছাড়া সব সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্মের প্রভাব সমান নয়। এই জিনিসগুলো বিবেচনা করে আপনি এই অংশের জন্য কোন কোন টপিক শিখবেন তার একটা তালিকা করে নিন। আমি এখানে সময়কালের উপর ভিত্তি করে কিছু টপিক ও সাহিত্যিকদের নাম দিচ্ছি।

আধুনিক যুগের সাহিত্যিক:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রমথ চৌধুরী, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাস, মীর মোশারফ হোসেন, কায়কোবাদ, বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়, দীনবন্ধু মিত্র, বিহারীলাল চক্রবর্তী, জসীম উদ্দিন, ফররুখ আহমদ, নজিবর রহমান সাহিত্যরত্ন, মধুসূদন দত্ত, অদ্বৈত মল্লবর্মন, শামসুর রহমান, আহসান হাবীব, জহির রায়হান, মানিক বন্দোপাধ্যায়

মধ্যযুগের সাহিত্যিকঃ
বড়ূচন্ডীদাস, শাহ্ মুহম্মদ সগীর, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, সৈয়দ সুলতান, ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর , কৃত্তিবাস, দৌলত উজির বাহরাম খান, মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, কাশীরাম দাস, আলাওল, আবদুল হাকিম, , শাহ্ মুহম্মদ গরীবুল্লাহ

গুরুত্বপূর্ণ টপিকঃ
চর্যাপদ, শ্রীকৃষ্ণকীর্তণ, বৈষ্ণব পদাবলী, আরাকান রাজসভা, রাজসভা কেন্দ্রিক বাংলা সাহিত্য, শিবায়ন কাব্য, শাক্তপদাবলি, নাথ সাহিত্য, ময়মনসিংহ গীতিকা, বাউল সাহিত্য।

আপনার উপস্থাপনা ও ভাষাজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে আপনি এই অংশটিতে অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকতে পারেন। তাই এই অংশে সাহিত্য মানের ভাষা ব্যবহার করে উত্তর দিতে হবে।


১। সংক্ষিপ্ত উত্তরের প্রশ্ন বলে একদম দু-এক কথায় উত্তর দেবেন না। আবার অপ্রয়োজনীয় বিষয় উপস্থাপন করে প্রশ্ন খুব বেশি বড় করেও ফেলবেন না।
২। সাহিত্যকর্ম নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই চরিত্রের নাম উল্লেখ করে উত্তর করবেন
৩। কোন চরিত্রের নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা উল্লেখ করার প্রয়োজন হলে চরিত্রের উদ্ধিতি দিতে হবে। কোন ক্ষেত্রে চরিত্রের মুখের ভাষা আঞ্চলিক ভাষা হলে চেষ্টা করবেন সেটা ব্যবহার করতে।
৪। সাহিত্যিক নিয়ে প্রশ্ন হলে অবশ্যই তার বিখ্যাত বইয়ের নাম ও প্রকাশের সময়কাল উল্লেখ করে উত্তর করবেন।

কোন বই থেকে শিখবেন?
৫। সৌমিত্র শেখরের- ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা (এই বইটি থেকে মোটামুটি সব টপিকই পেয়ে যাবেন )
৬। প্রদত্ত বইয়ের লেখকের গ্রন্থ সমালোচনা/ পর্যালোচনা
৭। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস – মাহবুবুল আলম
৮। বুক রিভিউ

অনুবাদ
অনুবাদে ১৫ নম্বর থাকে। সুন্দর ও প্রাঞ্জল অনুবাদ করতে পারলে ভাল মার্ক পাওয়া যায়। অনুবাদ শুরু করার আগে টপিকটা ভালমতো কয়েকবার পড়ে নিন। আক্ষরিক অনুবাদ করবেন না, এতে ভাষার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। ভাবানুবাদই বেশি গ্রহনযোগ্য। পরীক্ষার হলে ভাল অনুবাদ করার জন্য বাসায় চর্চা করার প্রয়োজন। চর্চা করার সময় প্রথমে শব্দের অর্থ অনুযায়ী একবার অনুবার করে নেবেন। এরপর এটাকে সহজ সরল ও ভাবানুবাদ টাইপের করার জন্য ছোট ছোট বাক্যে ভেঙ্গে ফেলুন। ছোট বাক্যে ভেঙ্গে ফেললে এমনিতেই ভাষা অনেকটা সুন্দর হয়ে যায়। আর চর্চা করার জন্য একটি পত্রিকার ফিচারগুলো ফলো করতে পারেন। যে পত্রিকার বাংলা ও ইংরেজি দুই ভার্শনই আছে এমন একটি পত্রিকা সিলেক্ট করুন। এবার দুটির সাথে মিলিয়ে সহজেই ভাল অনুবাদ সম্পর্কে ধারনা তৈরি করে নিতে পারবেন।

গ্রন্থ সমালোচনা
গ্রন্থ সমালোচনার জন্য ভাষাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাই একটু কষ্ট হলেও গ্রন্থ-সমালোচনা দু-তিনটি বই থেকে ভাষার ধরণটা একটু আয়ত্ত করে নিতে হবে। তবে ভাষার পাশাপাশি লেখার ফরম্যাটটিও সুন্দর হতে হবে। ফরম্যাটি সাহিত্যকর্মের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তন হতে পারে। একই ফরমেটে যে লিখতে হবে এমন নয়।
১। প্রথমেই সাহিত্যকর্মের ধরণ উল্লেখ করতে হবে। অর্থাৎ এটি কি গল্প না উপন্যাস, নাকি ছোটগল্প এটা উল্লেখ করবেন।
২। আবার এটি উপন্যাস হলে কি ধরনের উপন্যাস এসব বিষয় উল্লেখ করতে হবে।
৩। এরপর মূল বিষয়বস্তু বা থিম নিয়ে সুন্দর করে নিজের ভাষায় লিখতে হবে।
৪। উপন্যাস বা গল্প হলে এরপর গল্পের প্রধান চরিত্রগুলোর দিকে আলোকপাত করতে হবে।
৫। এই সাহিত্যকর্ম যদি অন্য সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্মকে প্রভাবিত করে সেটা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
৬। ইচ্ছে করলে এই গল্প বা উপন্যাস রচনার সময়কাল ও সেসময়ের সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতকে এই উপন্যাস কতটুকু তুলে ধরতে পেরেছে সেটা উল্লেখ করতে পারেন।
৭। যদি অন্য কোন লেখকের লেখার প্রভাব এই লেখকের উপর থাকে সেটাও উল্লেখ করতে পারেন।
৮। এই অংশটুকুর পরে যা লিখবেন তা মূলত আপনার নিজস্ব মতামতের মত। এটি সফল উপন্যাস কিনা? নামকরণের সার্থকতা কি? এটি কালজয়ী কিনা? এগুলো নিয়ে লিখতে পারেন।

পত্র লিখন
পত্র লিখন টাইপের জিনিসে খুব বেশি সাহিত্যমানের ভাষা ব্যবহার করা যায় না। করলেও সম্ভবত খুব বেশি মার্ক পাওয়া যায় না। তবে এসব ক্ষেত্রে ফরম্যাট ঠিক রাখাটা বেশি জরুরী। বিশেষ করে আনুষ্ঠানিক/দাপ্তরিক পত্রের ফরম্যাট সঠিক না হলে মার্ক পাওয়া যাবে না। আর ব্যক্তিগত পত্রের ক্ষেত্রে কিছুটা আবেগের প্রয়োগ ঘটাতে পারেন। এতে এক্সামিনার হয়ত আপনার ভাষার ব্যবহার নিয়ে সন্তুষ্ট হবে। বিগত বছরের প্রশ্ন দেখে কি ধরনের প্রশ্ন আসে সে সম্পর্কে একটা ভাল ধারনা করে বাসায় একটু চর্চা করলেই এই অংশের প্রস্তুতি হয়ে যাবে আশা করতে পারেন। বাজারের অন্য বইগুলোর থেকে সৌমিত্র শেখরের বাংলা দর্পন আমার কাছে ভাল মনে হয়েছে। এই অংশ উত্তর করার ক্ষেত্রে কিছু জিনিস খেয়াল রাখবেন –
১। ব্যক্তিগত পত্র বা মানপত্র না দিয়ে আনুষ্ঠানিক বা দাপ্তরিক পত্র দিতে চেষ্টা করবেন
২। ফরম্যাট অবশ্যই সঠিক রাখবেন
৩। সুন্দর খাম দিলে লেখা সম্পর্কে পজিটিভ ধারনা তৈরি হয়। তাই খাম দেবেন।
৪। তারিখ ইত্যাদি ছোটখাট বিষয় ভুল করা যাবে না।

কাল্পনিক সংলাপ
সংলাপের ক্ষেত্রে কিছু জিনিস লক্ষ্য রাখলেই ভাল সংলাপ তৈরি করা সম্ভব।
১। কার সাথে কার সংলাপ হচ্ছে সেটার উপর নির্ভর করে সংলাপের চরিত্রদের ভাষা নির্ধারন করতে হবে।
২। অফিসিয়াল আলাপ আলোচনা হলে অবশ্যই অফিশিয়াল ভাষা ব্যবহার করতে হবে।
৩। রাজনৈতিক সংলাপ হলে সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়গুলো উঠে আসতে হবে।
৪। সংলাপে সাহিত্যিক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না। তবে আঞ্চলিক বা শর্টকার্ট ভাষাও ব্যবহার করা ঠিক হবে না। চলিত ভাষা ব্যবহার করতে হবে।
৫। যে বিষয়ে সংলাপের সেই বিষয়েই বেশি কথা বলতে হবে। বাড়তি বাক্য ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। এতে সংলাপ দীর্ঘ হয়ে যাবে। ফলে ভাল মার্ক পাবার সম্ভবনা কমে যাবে।

প্রবন্ধ রচনা
রচনাতে ৪০ মার্ক। এটা কিন্তু অনেক। গতানুগতিক একটি প্রবন্ধ লিখেই ভাল মার্ক পাওয়া যাবে না। কিছু বিষয় বিবেচনা করে লিখলে রচনাতে ভাল মার্ক তুলতে পারবেন।–
১। শুরুটা অবশ্যই সুন্দর ভাষায় হতে হবে এবং একই সাথে তথ্যবহুল হতে হবে
২। রচনার বিষয়বস্তুকে ক্যটাগোরাইজড করে ফেলুন। এরপর প্যারা করে লিখুন। এতে আপনি কেমন তথ্য উপস্থাপন করছেন সেটা পরীক্ষক সহজেই বুঝতে পারবেন।
৩। রচনাতে যেহেতু অনেক মার্ক তাই রচনা সংক্ষিপ্ত করবেন না। কিন্তু তাই বলে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় লিখা চলবে না।
৪। যত বেশি সম্ভব উদ্ধৃতি ব্যবহার করুন।
৫। বিভিন্ন বিখ্যাত মনিষীর দেওয়া সংজ্ঞা ব্যাবহার করতে পারেন। পাশাপাশি এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা, অক্সফোর্ড ডিকশনারি এগুলোর দেওয়া সংজ্ঞাও ব্যবহার করতে পারেন।

৬। উদাহরণ দেওয়ার মত টপিক হলে ব্যবহার করতে হবে।
৭। যদি তথ্যবহুল টপিক হয় তাহলে পাই চার্ট, ছক, গ্রাফ এগুলো ব্যবহার করলে আপনার লেখার মান সম্পর্কে পরীক্ষকের উচ্চ ধারনা তৈরি হবে। তাই একটু কষ্ট হলেও এগুলো ব্যবহার করুন। মার্কের ক্ষেত্রে আপনি অন্যদের ছাড়িয়ে যাবেন।
৮। উপসংহারটি সুন্দর ভাষার লিখতে হবে।
You must do the things you think you cannot do– Eleanor Roosevelt
লেখা সংক্রান্ত যেকোনো পরামর্শের জন্য আমার ইনবক্সে টেক্সট করতে পারেন। Facebook ID: Avizit Basak
বি দ্রঃ লেখাটাতে শুধু আমার নিজের আইডিয়া অনুযায়ী ধারণা দেয়া হয়েছে। আপনি আপনার মত করেও প্রস্তুতি নিতে পারেন। সফল হবার জন্য যে প্রস্তুতি দরকার, সেটা সম্পন্ন করাটাই মুখ্য কাজ।
সবার জন্য শুভকামনা ।

Add a Comment