শাসন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ

প্রশ্ন-১ সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকারের বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগ থেকে সম্পূর্ন প্রথকীকরন করা দরকার বলে কী আপনি মনে করেন? বিশ্লেষণ করুন। (২৫তম বিসিএস লিখিত)

শাসন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ দীর্ঘকালের দাবি। কিন্তু আজও অনেক দেশে বিচার বিভাগ শাসন বিভাগ থেকে পৃথক হতে পারে নি। বাংলাদেশের বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগ থেকে পৃথক করা হয়েছে। বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের জন্য কেন্দ্র থেকে দেশের তৃণমূল পর্যন্ত বিচার বিভাগের যত স্তর আছে সকল স্তরে স্বতন্ত্র বিচার বিভাগীয় ক্যাডারের লোক নিয়োগ করা আবশ্যক। প্রশাসনিক আদালতে প্রশাসনের অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে বিচারকাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে শাসন বিভাগের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার বিবেচনাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এভাবে দেখা যায় যে, বিচার বিভাগ একটি স্বতন্ত্র বিভাগ হলেও এর বিভিন্ন পর্যায়ে শাসন বিভাগের হস্তক্ষেপ ও সংশ্লিষ্টতা বিদ্যমান।

মন্টে (Montesquieu) বলেন, “যখন একই ব্যক্তির হাতে একাধিক ক্ষমতা থাকে তখন জনগণের স্বাধীনতা থাকতে পারে না।” নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য শাসন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করা দরকার। এজন্য কতগুলো পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। যেমন

(ক) বিচার বিভাগকে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে এবং প্রতিটি স্তরে শুধু বিচার বিভাগের লোক নিয়োগ করতে হবে। কোনো পর্যায়ে শাসন বিভাগের লোক নিয়োগ করা চলবে না।

(খ) বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে শাসন বিভাগের প্রাধান্য হ্রাস করতে হবে। স্থায়ী বিচারকমণ্ডলীর সুপারিশ ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে বিচারক নিয়োগ করা যাবে না। এজন্য প্রয়োজনবোধে সকল পর্যায়ে বিচারকদের নিয়ে কমিটি গঠন করা যেতে পারে। দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়ে বিচারক ও প্রধান বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।

(গ) বিচার বিভাগকে পৃথক করার জন্য প্রশাসনিক আইন ও প্রশাসনিক আদালত ব্যবস্থা রহিত করতে হবে। আইন আদালতের সর্বত্র এবং সকল ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের প্রাধান্যকে স্বীকৃতি দিতে হবে। তবেই শাসন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করা সম্ভব হবে।

Add a Comment