ধাতু

এখান থেকে BCS Preliminary তে প্রশ্ন হয়েছে ২টি

বাংলা ভাষায় বহু ক্রিয়াপদ রয়েছে। সেসব ক্রিয়াপদের মূল অংশকে বলা হয় ধাতু বা ক্রিয়ামূল। (১০তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) অন্যকথায় ক্রিয়াপদকে বিশ্লেষণ করলে দুটো অংশ পাওয়া যায়:

(১) ধাতু বা ক্রিয়ামূল এবং
(২) ক্রিয়া বিভক্তি।

ক্রিয়াপদ থেকে ক্রিয়া বিভক্তি বাদ দিলে যা থাকে তাই ধাতু। যেমন – ‘করে’ একটি ক্রিয়াপদ। এতে দুটো অংশ রয়েছে : কর্‌ +এ; এখানে ‘কর্‌’ ধাতু এবং ‘এ’ বিভক্তি। সুতরাং করে ক্রিয়ার মূল বা ধাতু হলো ‘কর্‌’ আর ক্রিয়া বিভক্তি হলো ‘এ’। অন্যকথায় ‘কর্‌’ ধাতু বা ক্রিয়ামূলের সঙ্গে ‘এ’ বিভক্তি যুক্ত হয়ে ‘করে’ ক্রিয়াপদটি গঠিত হয়েছে।

প্রচলিত বেশকিছু ধাতু বা ক্রিয়ামূল চেনার একটা উপায় হলো : বর্তমান কালের অনুজ্ঞায় তুচ্ছার্থক মধ্যম পুরুষের ক্রিয়ার রূপ লক্ষ করা। কারণ, এই রূপ আর ধাতুরূপ এক। যেমন – কর্‌, খা, যা, ডাক্, দেখ, লেখ ইত্যাদি। এগুলো যেমন ধাতুও, তেমনি মধ্যম পুরুষের তুচ্ছার্থক বর্তমান কালের অনুজ্ঞার ক্রিয়াপদও।

ধাতুর প্রকারভেদ ধাতু তিন প্রকারের:
(১) মৌলিক ধাতু,
(২) সাধিত ধাতু এবং
(৩) যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু

১. মৌলিক ধাতু: যেসব ধাতু বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়, সেগুলোই মৌলিক ধাতু। এগুলোকে সিদ্ধ বা স্বয়ংসিদ্ধ ধাতুও বলা হয়। যেমন –চল, পড়, কর্‌, শো, হ, খা ইত্যাদি। বাংলা ভাষায় মৌলিক ধাতুগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায় :

(ক) বাংলা,
(খ) সংস্কৃত এবং
(গ) বিদেশি ধাতু।

ক, বাংলা ধাতু: যেসব ধাতু বা ক্রিয়ামূল সংস্কৃত থেকে সোজাসুজি আসেনি সেগুলো হলো বাংলা ধাতু। যেমন- কাট্‌, কাঁদ, জান্, নাচ্‌ ইত্যাদি।
খ. সংস্কৃত ধাতু: বাংলা ভাষায় যেসব তৎসম ক্রিয়াপদের ধাতু প্রচলিত রয়েছে তাদের সংস্কৃত ধাতু বলে। যেমন – কৃ, গম, ধৃ, গঠ্‌, স্থা ইত্যাদি।
গ. বিদেশাগত ধাতু: প্রধানত হিন্দি এবং ক্বচিৎ আরবি-ফারসি ভাষা থেকে যেসব ধাতু বা ক্রিয়ামূল বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বিদেশাগত ধাতু বা ক্রিয়ামূল বলা হয়। যেমন – ভিক্ষে মেগে খায়। এ বাক্যে ‘মাগ্‌’ ধাতু হিন্দি ‘মাঙ্‌’ থেকে আগত। এছাড়াও কতগুলো ক্রিয়ামূল রয়েছে যাদের ক্রিয়ামূলের মূল ভাষা নির্ণয় করা কঠিন। এ ধরনের ক্রিয়ামূলকে বলা হয় অজ্ঞাতমূল ধাতু। যেমন – ‘হের ঐ দুয়ারে দাঁড়িয়ে কে?’এ বাক্যে ‘হের’ ধাতুটি কোন ভাষা থেকে আগত তা জানা যায় না। তাই এটি অজ্ঞাতমূল ধাতু।

২. সাধিত ধাতুঃ মৌলিক ধাতু কিংবা কোনো কোনো নাম -শব্দের সঙ্গে ‘আ’ প্রত্যয় যোগে যে ধাতু গঠিত হয়, তাকে সাধিত ধাতু বলে। যেমন – দেখ্‌ + আ= দেখা, পড়+আ= পড়া, বল+আ=বলা। সাধিত ধাতুর সঙ্গে কাল ও পুরুষসূচক বিভক্তি যুক্ত করে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়। যেমন – মা শিশুকে চাঁদ দেখায়। (এখানে দেখ+আ+বর্তমান কালের সাধারণ নামপুরুষের ক্রিয়া বিভক্তি ‘য়’ = দেখায়)। এরূপ শোনায়, বসায় ইত্যাদি।

গঠনরীতি ও অর্থের দিক থেকে সাধিত ধাতু তিন শ্রেণিতে বিভক্ত:
ক. নাম ধাতু,
খ. প্রযোজক (নিজন্ত) ধাতু,
গ. কর্মবাচ্যের ধাতু।

ক. নাম ধাতু: বিশেষ্য, বিশেষণ এবং অনুকার অব্যয়ের পরে ‘আ’ প্রত্যয় যোগ করে যে নতুন ধাতুটি গঠিত হয় তা-ই নাম ধাতু। যেমন –সে ঘুমাচ্ছে। ‘ঘুম’ থেকে নাম ধাতু ‘ঘুমা’। ‘ধমক’ থেকে নাম ধাতু ধমকা। যেমন আমাকে ধমকিও না।

খ. প্রযোজক ধাতু: মৌলিক ধাতুর পরে প্রেরণার্থ (অপরকে নিয়োজিত করা অর্থে) ‘আ’ প্রত্যয় যোগ করে প্রযোজক ধাতু বা ণিজন্ত ধাতু গঠিত হয়। যেমন – কর্‌ + আ= করা (এখানে ‘করা একটি ধাতু । যেমন – সে নিজে করে না, আর একজনকে দিয়ে করায়। অনুরূপভাবে- পড় + আ=পড়া; তিনি ছেলেকে পড়াচ্ছেন।

গ. কর্মবাচ্যের ধাতু: মৌলিক ধাতুর সঙ্গে ‘আ’ প্রত্যয় যোগে কর্মবাচ্যের ধাতু সাধিত হয়। এটি বাক্যমধ্যস্থ কর্মপদের অনুসারী ক্রিয়ার ধাতু। যথা – দেখ্‌+ আ=দেখা; কাজটি ভালো দেখায় না। হার্‌+আ=হারা; ‘যা কিছু হারায় গিন্নী বলেন, কেষ্টা বেটাই চোর’। (২৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) ‘কর্মবাচ্যের ধাতু’ বলে আলাদা নামকরণের প্রয়োজন নেই। কারণ, এটি প্রযোজক ধাতুরই অন্তর্ভুক্ত। যেমন- ‘দেখায়’ এবং ‘হারায়’ প্রযোজক ধাতু।

৩. সংযোগমূলক ধাতু: বিশেষ্য, বিশেষণ বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সঙ্গে কর্‌, দে, পা, খা, ছাড় ইত্যাদি মৌলিক ধাতু সংযুক্ত হয়ে যে নতুন ধাতু গঠিত হয়, তা-ই সংযোগমূলক ধাতু। যেমন – যোগ (বিশেষ্য পদ) + কর্‌ (ধাতু) = ‘যোগ কর’ (সংযোগমূলক ধাতু)। উদাহরণ- তিনের সঙ্গে পাঁচ যোগ করো। সাবধান (বিশেষ্য) +হ (ধাতু = সাবধান হ (সংযোগমূলক ধাতু। উদাহরণ- এখনও সাবধান হও, নতুবা আখেরে খারাপ হবে।

সংযোগমূলক ধাতুজাত ক্রিয়া সকর্মক ও অকর্মক দুই-ই হতে পারে। নিচে সংযোগমূলক ধাতু যোগে গঠিত কয়েকটি ক্রিয়াপদের উদাহরণ দেওয়া হলো।

Add a Comment