প্রবন্ধ রচনা

প্রবন্ধ শব্দের অর্থ প্রকৃষ্ট রূপে বন্ধন। এখানে ভাব ও ভাষার বন্ধনকে বুঝায়। কোন মননশীল ভাব বা তথ্যকে উপযুক্ত ভাষার মাধ্যমে যুক্তি পরম্পরায় সুসংহতভাবে প্রকাশিত হয়ে শিল্পরূপ লাভ করলে তাকে প্রবন্ধ বলে।

প্রবন্ধের অংশঃ একটি প্রবন্ধের সাধারণত তিনটি অংশ থাকে ভূমিকা, মূলভাব, ও উপসংহার। আবার কিছু কিছু প্রবন্ধ চার অংশে যথা- ভূমিকা, সমস্যা, সমাধানের প্রস্তাব ও উপসংহার। অনেকে পাঁচ অনুচ্ছেদের প্রবন্ধ ও লিখতে পারেন, যেখানে থাকে ভূমিকা বা প্রস্তাবনা, অনুচ্ছেদ-১, অনুচ্ছেদ-২, অনুচ্ছেদ-৩, ও উপসংহার। অনেকে এখন এভাবে লেখে।

ভূমিকাঃ ভূমিকায় মূল কথাটি থাকতে হবে। এ অংশটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা এর মাধ্যমেই আপনি আলোচনায় প্রবেশ করতে যাচ্ছেন তাই এতে মূল বিষয়ের প্রতিফলন ঘটিয়ে পাঠকের কাছে হৃদয়গ্রাহী ও আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। এখানে বাক্য চয়ন এমন ভাবে করতে হবে, যা পাঠককে আকর্ষণ করতে আঁঠার মত কাজ করবে। ও সে আগ্রহভবে পরের দিকে পড়তে চাইবে। এখানে এমন একটা বাক্য থাকা দরকার যাতে পাঠক উক্ত বিষয়ে আপনার অবস্থান সহজেই বুঝতে পারে। তার পর মূল অংশে আপনার মতামতের স্বপক্ষে যুক্তি দেখাবেন। ভূমিকা পড়ার পর পাঠক, আপনি কি লিখবে শুধু তাই বুঝবে না কিভাবে লিখবেন তাও যেন বুঝতে পারে। ধরুন আপনি কারও জীবনী লিখতেছেন, সেক্ষেত্রে তাঁর কয়েকটি বৈশিষ্টের কথা দিয়ে শুরু করতে পারেন। যে বৈশিষ্টগুলো আপনি মূল অংশে ব্যাখা করবেন।

মূল অংশঃ এ অংশে ভাবের পরম্পরা ঠিক রেখে বিভিন্ন বিষয় Points আকারে লিখতে হবে। প্রতিটি Points বা অনুচ্ছেদ কত বড় হবে তা নির্ভর করবে ঐ অনুচ্ছেদের ভাব প্রকাশের পূর্ণতার উপর। এ লক্ষ্য রাখতে হবে যে প্রতিটি আলচনা যেন একটি একক সমাপ্তির দিকে যায়। মনে রাখতে হবে যে প্রতিটি অনুচ্ছেদই শুরু হবে ঐ অনুচ্ছেদের সূচনাকারী হিবাসে। অনুচ্ছেদগুলো হতে হবে সংঘবদ্ধ যেমন কেউ ‘প্রথমত’ কথাটি দিয়ে শুরু করলে, অবশ্যই’দ্বিতীয়ত’ তৃতীয়ত’ কথাগুলো আসবে। গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ গুলো প্রথমে লিখবেন। উৎস উল্লেখ করে সঠিক তথ্য লিখবেন। যুক্তিগুলো যেন দ্বার্থ্যবোধক না হয়। কোন বিষয় লিখতে গিয়ে অনেক সময় লেখা হয় ” এটা খুব গুরুত্বপূর্ন” এভাবে না লিখে “অনেক দিক বিবেচনায় এটার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক” ভাল হয় পাঠকের কাছে বিরক্তিকর মনে হয় না। কোন কিছুর সজ্ঞা, প্রকারভেদ, সাদৃশ্য বৈসাদৃশ্য, কার্য-কারন ইত্যাদি ব্যাখ্যা করবেন। তবে পক্ষপাতিত্ব না করে নিরপেক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। আরও, অধিকন্তু, অপরপক্ষেম অনুরূপভাবে, শব্দগুলো ব্যবহারে রচনার সৌন্দর্য বাড়ে।

উপসংহারঃ এ অংশটিও ভূমিকার মত চিন্তা করে লিখতে হবে। মূল অংশের ক্রমাগ্রগতি ও ক্রমবিকাশের ধারা বহন করে উপসংহারে এসে এক অখণ্ড ভাবের ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করতে হবে। এখানে আলোচনার মাধ্যমে যে বিষয়ে উপনীত হওয়া গেল তা, লেখকের আশা আকাঙ্ক্ষা বা চাওয়া, বা নিজের মতামত লেখা যেতে পারে। উপসংহার শুরু করা যেতে পারে এভাবে উপসংহারে, পরিশেষে, সব শেষে বলা যায় যে, উপর্যুক্ত তথ্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, তাই এ কথা বলা যায় যে, সবিশেষে এ কথা স্পষ্ট যে, ইত্যাদি লিখে । সম্পূর্ণ রচনার সারগর্ভ থাকবে তবে ভিন্ন বাক্যে ও ভিন্ন শব্দে যা ভূমিকার সাথে মিলবে না। সর্বশেষ বাক্যটি হবে সমাপ্তি সূচক ও Call to Action এর মত । বিষয়টা চিন্তা করবেন উল্টা পিরামিডের মত। অনেক ডাল পালা নিয়ে লিখতে লিখতে ছোট শীর্ষে চলে আসার মত। পাঠককে একটি যৌক্তিক ও নিরপেক্ষ উপসংহার উপহার দিতে হবে। যাতে আবারও বুঝতে পারে এতক্ষণ তারা কি পড়ছে।

সাধারণ নিয়মঃ নিচের পরামর্শগুলো যে কোন প্রবন্ধ লেখার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। একেক রচনার জন্য একেক টা গ্রহণ করা যেতে পারে।

  • যে বিষয়ে লিখবেন তা নিয়ে একটু চিন্তা ভাবনা করবেন। কোন কোন Point এ কি কি লিখবেন তা ভেবে নিয়ে Points গুলো আলাদা করে লিখে রাখবেন।
  • মূল বক্তব্যে ৫-৭ টি অনুচ্ছেদে লেখা যেতে পারে।
  • শব্দ সংখ্যা নির্দিষ্ট না থাকলে ও তা ১৫০০ থেকে ২০০০ এর মধ্যে রাখবেন।
  • সাধারণ নিয়মগুলো পড়ে ভাববেন না “পরীক্ষার হলে কি হয় দেখে নেব”। অবশ্যই বাসায় অনুশীলন করবেন।
  • ভাষা হতে হবে সহজ সরল ।
  • অতিরিক্ত ও অবান্তর কথা বর্জনীয়, মনে রাখতে হবে “অল্প কথায় কাজ হইলে বেশি কথার প্রয়োজন কী?”
  • সাধু-চলিতের মিশ্রণ দূষণীয়। বর্তমানে চলিত ভাষার যেহেতু জয়জয়কর তাই, সেটাই গ্রহণ করলে ভাল হয়।
  • কর্তৃ বাচ্য অর্থাৎ , আমি, আমরা তুমি তোমরা না ব্যবহার করাই শ্রেয়। যেমন লেখলেন “আমি অনেক সময় লক্ষ্য করেছি…” এভাবে না লিখে “অনেক সময় লক্ষ্য করা যায়…” লিখলে লেখকের কর্তৃত্ব প্রকাশ না পেয়ে পাঠককে ও রচনার অংশ বানানো যায়।
  • শব্দ সংক্ষেপ ব্যবহার না করে পূর্ণরূপ লিখবেন। ইংরেরজিত ক্ষেত্রে Contraction Form(e.g. don’t) ব্যবহার না করা।
  • নিজের মতামতের পিছনে সঠিক তথ্য থাকা দরকার।
  • কোন বিতর্কিত বিষয়ের পক্ষ বিপক্ক ব্যাখ্যা করে সিদ্ধান্তে আসা উচিৎ।
  • নিচের Phrase গুলো ইংরেজি রচনার ক্ষেত্রে ও অনুবাদ করে বাংলায় ব্যবহার করা যেতে পারে।
exceptions – but, alas, however, etc.
illustrations – for instance, for example, etc.
conclusions – thus, so, therefore, consequently, etc.
comparisons – similarly, by contrast, etc.
qualifications – yet, still, etc.
additions – moreover, furthermore, etc.

মনে রাখতে হবেঃ

  • কি বিষয়ে প্রবন্ধ লিখতে হবে উদ্দেশ্য কি?
  • কত বড় হবে
  • ভাষা কেমন হবে?
  • বিষয়টি নিয়ে ভাবা ।
  • উক্ত বিষয়ে নিজের চিন্তা ভাবনা কে প্রসারিত করা।
  • উপকারিতা অপকারিতা, ভালদিক মন্দ দিক তুলে ধরবেন, নিরপেক্ষভাবে।
  • মূল টপিকটি লিখে তাতে গোল দাগ দিবেন ও তা থেকে বিভিন্ন শাখা প্রশাখা বের করার চেষ্টা করবেন। সেগুলোর প্রবাব চিন্তা করবেন। তারপর সেগুলোকে কিভাবে বিন্যস্ত করে লিখবেন তা চিন্তা করবেন।
  • প্রবন্ধকে কালের পরিক্রমায় না লিখে ভাবের পরম্পারায় লিখতে পারেন।
  • মূল অংশে বিভিন্ন অনুচ্ছেদে এক এক করে যুক্তি দেখিয়ে শেষে উপসংহার লেখা যেতে পারে।
  • টপিকটা কে একটি টেবিলের উপরের তক্তাত মত ভাবতে পারে। যার চারটি পায়া হিসাবে আপনাকে যুক্তি ও প্রমান দিয়ে স্থির ও মজবুত করে তুলতে হবে।
  • নিজেকে নিজে প্রশ্ন করবেন, কি, কে, কেন, কোথায়, কিভাবে, কার/কিসের সাথে, কি জন্য, ইত্যাতি। করে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবেন।
  • সঠিক শব্দ খোঁজার জন্য অনেক সময় ব্যয় করবেন না। দরকার হলে অন্য শব্দ ব্যবহার করে লিখুন।
  • লেখা শেষ হলে চেষ্টা করবেন নিজে একবার পড়ার জন্য। এতে কিছু সংশোধন করা যেতে পারে।
  • নিয়মিত পত্রিকার প্রবন্ধ, প্রতিবেদন ও ভাষণ পাঠ করলে, শব্দ ভাণ্ডার যেমন বাড়বে, নিজের লেখার হাত ও ভালো হবে।

বিসিএস লিখিত-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা

Add a Comment