বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি

অবস্থান
এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে বাংলাদেশ অবস্থিত। ২০°৩৪ উত্তর অক্ষরেখা থেকে ২৬°৩৮ উত্তর অক্ষরেখা এবং ৮৮°০১ পূর্ব দ্রাঘিমারেখা থেকে ৯২°৪১ পূর্ব দ্রাঘিমারেখা পর্যন্ত বাংলাদেশের বিস্তৃতি। বাংলাদেশের প্রায় মধ্য দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা অতিক্রম করেছে। এদেশের মোট আয়তন প্রায় ১,৪৭,৬১০ বর্গ কিলোমিটার। বাংলাদেশের পশ্চিম, উত্তর ও উত্তর-পূর্বে ভারত, দক্ষিণ-পূর্বে মায়ানমার এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত।

ভূপ্রকৃতি
বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ বদ্বীপ। এদেশের ভূখণ্ড উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ক্রমশ ঢালু। পূর্বে সামান্য উচ্চভূমি ছাড়া সমগ্র দেশ বিস্তীর্ণ সমভূমি।

Geography of Bangladesh
Geography of Bangladesh

শ্রেণীবিভাগ: ভূমির বন্ধুরতার পার্থক্য ও গঠনের সময়ানুক্রমিক দিক থেকে বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতিকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(১) টারশিয়ারী যুগের পাহাড়সমূহ,
(২) প্লাইস্টোসিনকালের সোপানসমূহ বা চত্বরভূমি ও
(৩) সাম্প্রতিককালের প্লাবন সমভূমি।

প্রত্যেকটি যুগের ব্যাপ্তিকাল
টারিশিয়ারি যুগ শুরু হয়েছিল আজ থেকে ৬৬মিলিয়ন বছর আগে। টারশিয়ারি যুগে গঠিত ভূমিই বাংলাদেশের পুরাতন ভূমি। (৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) শেষ হয়েছে ২.৫৮মিলিয়ন বছর আগে। টারশিয়ারি যুগকে স্তন্যপায়ীদের যুগ বলা হয়। এ সময় ম্যামোথ নামে অতিকায় হস্তির বসবাস ছিল। টারিশিয়ারি যুগের পর শুরু হয় কোয়াটার্নারি যুগ। এটির দুটি ভাগ প্লাইস্টোসিন ও হলোসিন। প্লাইস্টোসিন কালের শুরু ২.৫৮মিলিয়ন বছর পূর্বে শুরু হয়ে শেষ হয় ১১.৭ হাজার বছর আগে। এ সময়কে বলা হয় বরফের যুগ । ১১.৭হাজার পূর্বে শুরু হয় হলোসিন যুগ যা এখন বর্তমান।

(১)টারশিয়ারী যুগের পাহাড়সমূহ: টারশিয়ারী যুগে হিমালয় পর্বত গঠনের সময় এসব পাহাড় সৃষ্টি হয়েছিল বলে এগুলোকে টারশিয়ারী পাহাড় বলে। এ পাহাড়ী অঞ্চলকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(ক) উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ ও
(খ) দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ।

উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ:
ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলার উত্তরাংশ, সিলেট জেলার উত্তর ও উত্তরপূর্বাংশ এবং মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের দক্ষিণাংশের ছোটবড় বিচ্ছিন্ন পাহাড়গুলো এ অঞ্চলের অন্তর্গত। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের দক্ষিণের পাহাড়গুলোর উচ্চতা ২৪৪ মিটারের বেশি নয়। শেরপুর ও ময়মনসিংহের উত্তর সীমানায় কিছু কিছু পাহাড় আছে। উত্তরের পাহাড়গুলোর মধ্যে চিকনাগুল, খাসিয়া ও জয়ন্তিয়া উল্লেখযোগ্য।


দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ: খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলা এবং চট্টগ্রামের অংশবিশেষ এ অঞ্চলের অন্তর্গত। এ পাহাড়গুলোর গড় উচ্চতা ৬১০ মিটার। বাংলাদেশের শৃঙ্গ কিওক্রাডং (উচ্চতা ১,২৩০ মিটার) এ অঞ্চলের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। সাম্প্রতিককালে বান্দরবানে আরো একটি শৃঙ্গ আবিষ্কৃত হয়েছে। এর নাম তাজিওডং (বিজয়) এবং উচ্চতা ১,২৩১ মিটার। এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এই অঞ্চলের অপর দুইটি উচ্চতার পাহাড় চূড়া হচ্ছে মোদকমুয়াল (১,০০০ মিটার) ও পিরামিড (৯১৫ মিটার)। এসব পাহাড় বেলেপাথর, শেল ও কর্দম শিলা দ্বারা গঠিত। এ অঞ্চলে পাহাড়গুলোর মধ্যবর্তী উপত্যকা দিয়ে কর্ণফুলী, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, হালদা প্রভৃতি নদী প্রবাহিত হয়েছে।

(২)প্লাইস্টোসিনকালের সোপানসমূহ বা চত্বরভূমি: ২৫,০০০ বছর পূর্বে প্লাইস্টোসিনকালে আন্তঃবরফগলা পানিতে প্লাবনের সৃষ্টি হয়ে এসব চত্বরভূমি গঠিত হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। এ অঞ্চলের মাটির রং লাল ও ধূসর। নিচে এ উচ্চভূমিগুলোর বর্ণনা দেওয়া হল।

বরেন্দ্রভূমি: বরেন্দ্রভূমি রাজশাহী বিভাগের প্রায় ৯,৩২০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আছে। প্লাবন সমভূমি থেকে এর উচ্চতা ৬ থেকে ১২ মিটার। মধুপুর ও ভাওয়ালের গড়: উত্তরের ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা নদী পর্যন্ত অর্থাৎ ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও গাজীপুর অঞ্চলজুড়ে এর বিস্তৃতি (৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) এর মোট আয়তন প্রায় ৪,১০৩ বর্গ কিলোমিটার। মাটি কংকর মিশ্রিত ও লাল। গড়ের পূর্ব ও দক্ষিণ অংশের উচ্চতা ৬ মিটার কিন্তু পশ্চিম ও উত্তর দিকের উচ্চতা ৩০ মিটার।
লালমাই পাহাড়: এটি লালমাই থেকে ময়নামতি পর্যন্ত বিস্তৃত। এর আয়তন প্রায় ৩৪ বর্গ কিলোমিটার। এ পাহাড়ের গড় উচ্চতা ২১ মিটার। এর মাটি লালচে এবং নুড়ি, বালি ও কংকর দ্বারা গঠিত।

(৩) সাম্প্রতিককালের প্লাবন সমভূমি
বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ ভূমি এ অঞ্চলের আওতায় পড়ে। এ অঞ্চল পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, মেঘনা প্রভৃতি নদী এবং এদের উপনদী ও শাখানদী বাহিত পলি দ্বারা গঠিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এ সমভূমির গড় উচ্চতা ৯ মিটারের কম। এ অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে অসংখ্য বিল ও জলাভূমি ছড়িয়ে আছে। এগুলো এদেশে ভূপ্রকৃতির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। রাজশাহী ও পাবনার চলন বিল, মাদারিপুরের বিল ও সিলেটের হাওরগুলো বর্ষার পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে হ্রদের আকার ধারণ করে। এ সমভূমি অঞ্চলের ভূমি খুব উর্বর।


👉 Read More...👇
🡸 🡺

Add a Comment