রূপকল্প-২০২১

জাতির জনক ও বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উন্নয়ন দর্শন ছিল অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক মুক্তি-মধ্যস্থতাকারী উন্নয়ন দর্শন, যা বিনির্মাণে নিয়ামক ভূমিকায় থাকবে জনগণ। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সমবায়কে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেয়ার কথা ভাবছিলেন। আর সে কারণেই দেশকে ২০২১ সালে একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেয়ার সুস্পষ্ট অঙ্গীকার নিয়ে ঘোষণা করা হয়েছে রূপকল্প-২০২১।
.

ভিশন-২০২১ বা রূপকল্প-২০২১ – নেয়ার কারণঃ

দু হাজার একুশ সালে বাংলাদেশ পঞ্চাশ বছরে পা রাখবে। সুবর্ণ জয়ন্তীর এই লগ্নে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে আমরা কোন অবস্থানে দেখতে চাই, সেটাই বস্তুত ভিশন ২০২১-এর মূল কথা। নতুন সহস্রাব্দে পদার্পণের পর ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত এক নিরাপদ বিশ্ব গড়ার প্রত্যয়। জাতিসংঘ যেমন মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (MDGS)-এ ইশতেহার বাস্তবায়নে কাজ করা শুরু করে, বাংলাদেশও তেমনি এই বৈশ্বিক উন্নয়ন-শোভাযাত্রায় সহযাত্রী হিসাবে অংশ নিতে ভিশন ২০২১-এর ব্যানার নিয়ে এগিয়ে আসে।
.

ভিশন-২০২১ এর উদ্দেশ্যঃ

ভিশন ২০২১-এর প্রধান লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা যেখানে চরম দারিদ্র্য সম্পূর্ণভাবে বিমোচিত হবে। সেজন্যে একগুচ্ছ সহায়ক কাজ নিশ্চিত করতে হবে। যেমন, গণতন্ত্র ও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠা করা; ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণ এবং জনপ্রতিনিধিত্বমূলক রাজনৈতিক অবকাঠামো বিনির্মাণ করা; রাজনৈতিক পক্ষপাতবিবর্জিত আইনের শাসন নিশ্চায়ক সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা; রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন করা; দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা; নারীর ক্ষমতায়ন এবং সমঅধিকার নিশ্চিত করা; এমনভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের রূপরেখা প্রণয়ন করা যাতে মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরণের নিশ্চয়তা থাকে, জনগণ ও শ্রমশক্তির সুরক্ষার বন্দোবস্ত থাকে, দারিদ্র্য দূরীকরণের ব্যবস্থা থাকে, খাদ্য, পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ব্যবস্থা থাকে, জ্বালানি ও বিদ্যুতের নিশ্চয়তা থাকে, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, আবাসন, পরিবেশ, পানিসম্পদের নিরাপত্তা থাকে, এবং সার্বিকভাবে জনজীবন ও সম্পদের সুরক্ষা থাকে; বৈশ্বিক পেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করা যাতে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত থাকে, জাতীয় সংস্কৃতি ও পররাষ্ট্র নীতি দৃঢ়তর হয়।
.

ভিশন-২০২১ – এর বিষয় সমূহঃ

রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের সমবায়কে কাজে লাগিয়ে ২২টি লক্ষ্য অর্জনে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে বর্তমান সরকার। ২২টি লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে- বিকাশমান অর্থনীতি, দারিদ্র্য মুক্তি, অংশীদারিত্বমূলক সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সামাজিক ন্যায়বিচার, নারীর সমঅধিকার, আইনের শাসন, মানবাধিকার, সুশাসন ও দূষণমুক্ত পরিবেশ।
.

ভিশন-২০২১ এর ২২টি লক্ষ্যমাত্রাঃ

==============================
রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে যে ২২টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে :
১। প্রতি গ্রামে সমবায় সমিতি গড়ে সমিতির সদস্যদের সন্তান কিংবা পোষ্যদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা। এভাবে ২০১০ সালের মধ্যে প্রথিমিক স্তরে ভর্তির হার ১০০ ভাগ নিশ্চিত করা।
২। ২০১০ সালের মধ্যে দেশের সব মানুষের জন্য নিরাপদ সুপেয় পানির ব্যবস্থ্যা করা।
৩। ২০১২ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা।
৪। ২০১৩ সালের মধ্যে প্রতিটি বাড়িকে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থার আওতায় আনা।
৫। ২০১৩ সালে বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার হবে ৮ শতাংশ। ২০১৭ সালে এই হার ১০ শতাংশে উন্নীত করে অব্যাহত রাখা।
৬। ২০১৩ সালে বিদ্যুতের সরবরাহ হবে ৭ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০১৫ সালে ৮ হাজার মেগাওয়াট। ২০২১ সাল নাগাদ দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা ২০ হাজার মেগাওয়াট
ধরে নিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
৭। ২০১৩ সালে পর্যায়ক্রমে স্নাতক পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
৮। ২০১৪ সালে নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
৯। ২০১৫ সালের মধ্যে সকল মানুষের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা।
১০। ২০১৫ সালে জাতীয় আয়ের বর্তমান হিস্যা কৃষিতে ২২ শিল্পে ২৮ ও সেবাতে ৫০ শতাংশের পরিবর্তে হবে যথাক্রমে ১৫, ৪০ এবং ৪৫ শতাংশ করা।
১১। ২০২১ সালে বেকারত্বের হার বর্তমান ৪০ থেকে ১৫ শতাংশে নেমে আসবে।
১২। ২০২১ সালে কৃষি খাতে শ্রমশক্তি ৪৮ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়াবে ৩০ শতাংশে।
১৩। ২০১১ সালে শিল্পে শ্রমশক্তি ১৬ থেকে ২৫ শতাংশে এবং সেবা খাতে ৩৬ থেকে ৪৫ শতাংশে উন্নীত হবে।
১৪। ২০২১ সাল নাগাদ বর্তমান দারিদ্র্যের হার ৪৫ থেকে ১৫ শতাংশে নামবে।
১৫। ২০২১ সালে তথ্য প্রযুক্তিতে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে বাংলাদেশ পরিচিতি লাভ করবে।
১৬। ২০২১ সালের মধ্যে দেশের ৮৫ শতাংশ নগরিকের মানসম্পন্ন পুষ্টি চাহিদা পূরণ নিশ্চিত হবে।
১৭। ২০২১ সালের মধ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য প্রতিদিন নূন্যতম ২১২২ কিলোক্যালরির উপর খাদ্য নিশ্চিত করা হবে।
১৮। ২০২১ সালের মধ্যে সকল প্রকার সংক্রামক ব্যাধি সম্পূর্ণ নির্মূল করা।
১৯। ২০২১ সালে গড় আয়ুষ্কাল ৭০ এর কোঠায় উন্নীত করা।
২০। ২০২১ সালে শিশু মৃত্যুর হার বর্তমান হাজারে ৫৪ থেকে কমিয়ে ১৫ করা।
২১। ২০২১ সালে মাতৃমৃত্যুর হার ৩.৮ থেকে কমে ১.৫ শতাংশ হবে।
২২। ২০২১ সালে প্রজনন নিয়ন্ত্রণ ব্যবহারের হার ৮০ শতাংশে উন্নীত করা।

এই ২২টি লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন সম্ভব হলে সত্যিকার অর্থে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নে সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

ভিশন-২০২১ এর সাথে ডিজিটাল বাংলাদেশ -এর সম্পর্কঃ

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ শব্দযুগলের সাথে ‘ভিশন ২০২১’ শব্দযুগলের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ইংরেজি ভিশন শব্দের অর্থ দূরদৃষ্টি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তির বছর ২০২১ সাল। ডিজিটাল যন্ত্রপাতি এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, অর্থাৎ আইসিটির বহুল ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ২০২১ সালে সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রে পরিণত করা এর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধশালী ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্য স্থির করেছে। কমপিউটার ও ইন্টারনেটের বহুল ব্যবহার এ দেশের জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। জনসাধারণের প্রত্যাশার সাথে সরকারের প্রত্যাশার মিলনের ফলে সমৃদ্ধশালী ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন
সম্ভব হবে বলে সবাই আশাবাদী।

বর্তমান সভ্যতা ডিজিটাল প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। কমপিউটার, মোবাইল ফোন, ক্যামেরা, প্রিন্টার, ইন্টারনেট ইত্যাদি ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্র ও ব্যবস্থার উদাহরণ। ডিজিটাল প্রযুক্তি, ডিজিটাল যন্ত্রপাতি ও তাদের সঠিক ব্যবহার দ্রুত উন্নয়নের চালিকাশক্তি। তাই রূপকল্প ২০২১-এর সাথে রয়েছে ডিজিটাল প্রযুক্তির গভীর সম্পর্ক। ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে দেশকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দেয়া রূপকল্প ২০২১-এর উদ্দেশ্য। ২০২১ সালের বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত, সুশিক্ষিত, সুদক্ষ এবং সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ।

ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন ২০২১-এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ‘নগদ অর্থের চেয়ে উত্তম জোটে’র (Better than cash Allign) সাথে অংশিদারিত্ব খুলে বাংলাদেশ —জনগণকে আর্থিক সেবাদানের ক্ষেত্রে কয়েক ধাপ এগিয়ে গেছে। বস্তুত, সরকার সামাজিক সুরক্ষার জন্যে জনগণকে প্রদেয় অর্থ এবং সেবা গ্রহণের বিনিময়ে জনগণের কাছ থেকে গৃহীতব্য সকল অর্থ লেনদেনের প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজ করে ডিজিটাল অর্থনীতির নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। এই প্রক্রিয়া সকল প্রকার অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেন এবং রেমিট্যান্স বিনিময়ের ক্ষেত্রকে সুগম ও সম্প্রসারিত করে ই-কমার্সকে শক্তিশালী করবে। ব্যয় সংকোচন, স্বচ্ছতাবর্ধন, সময় বাঁচানো প্রভৃতির সহায়ক হওয়ায় ডিজিটাল আর্থিক সেবাপ্রদানের এই পদ্ধতি বিশ্বের বহু সরকারের মতো বাংলাদেশ সরকারও গ্রহণ করেছে।
দেশে গ্রামের এবং শহরের মিলে ৫০০০-এর অধিক ডিজিটাল সেন্টার খোলায় গড়ে ৪.৫ মিলিয়ন মানুষকে সম্প্রতি ৬০টি ডিজিটাল সেবা-সুযোগের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে। এ সকল ডিজিটাল সেন্টারে দুজন উদ্যোক্তার মধ্যে একজন নারী নিযুক্তির বিধানকে বাধ্যতামূলক করায় নারী সংবেদনশীল সেবা প্রদানের পরিবেশও নিশ্চিত হচ্ছে।

From Facebook: BCS Written Preparation

Add a Comment