বিষবৃক্ষ

বিষবৃক্ষ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি উপন্যাস। এটি বঙ্কিমচন্দ্রের চতুর্থ বাংলা উপন্যাস এবং তাঁর বিষবৃক্ষ-কৃষ্ণকান্তের উইল-রজনী গার্হস্থ্যধর্মী উপন্যাসত্রয়ীর অন্যতম। ১২৭৯ বঙ্গাব্দের বৈশাখ সংখ্যা (১৮৭২) থেকে চৈত্র সংখ্যা (১৮৭৩) পর্যন্ত বঙ্গদর্শন পত্রিকায় মোট বারোটি কিস্তিতে বিষবৃক্ষ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

বিষবৃক্ষ উপন্যাসের বিষয়বস্তু ছিল সমসাময়িক বাঙালি হিন্দু সমাজের দুটি প্রধান সমস্যা – বিধবাবিবাহ ও বহুবিবাহ প্রথা। এই উপন্যাসের পটভূমি বিধবাবিবাহ আইন পাশ হওয়ার সমসাময়িক কাল। এই উপন্যাসের নায়িকা বিধবা কুন্দনন্দিনীর চরিত্রটি বঙ্কিমচন্দ্রের কনিষ্ঠা কন্যার ছায়া অবলম্বনে রচিত হয় বলে জানা যায়।

সারাংশ
গোবিন্দপুরের জমিদার নগেন্দ্রনাথ দত্ত কলকাতা যাত্রার পথে অনাথা বালিকা কুন্দনন্দিনীর সন্ধান পান। কুন্দকে তিনি কলকাতায় তাঁর ভগিনী কমলমণির কাছে রেখে এসেছিলেন। কিন্তু পরে স্ত্রী সূর্যমুখীর একান্ত অনুরোধে তাঁকে গোবিন্দপুরে নিয়ে আসেন। সূর্যমুখীর দূরসম্পর্কীয় ভাই তারাচরণের সঙ্গে কুন্দের বিবাহ হয়। কিন্তু বিবাহের কিছুকাল পরেই তারাচরণের মৃত্যু হলে কুন্দ বিধবা হয়। এরপর নগেন্দ্রনাথ কুন্দের রূপলাবণ্য দর্শনে তার প্রতি আকৃষ্ট হন, কুন্দও নগেন্দ্রের প্রতি অনুরক্তা হয়ে পড়েন। সূর্যমুখী বিষয়টি অনুধাবন করেন। অন্যদিকে দেবীপুরের দুশ্চরিত্র জমিদার দেবেন্দ্রও তারাচরণের গৃহে কুন্দকে দেখে তার প্রতি আকৃষ্ট হন। হরিদাসী বৈষ্ণবীর ভেক ধরে নগেন্দ্রর বাড়িতে এসে তিনি কুন্দকে কুপ্রস্তাব দিয়ে যান। হীরা দাসী এই ব্যাপারে অনুসন্ধান করে সূর্যমুখীকে হরিদাসীর প্রকৃত স্বরূপ সম্পর্কে অবহিত করে। এদিকে সূর্যমুখী কমলমণিকে চিঠিতে নগেন্দ্রনাথের কুন্দর প্রতি অনুরাগের কথা জানালে, কমলমণি কুন্দকে কলকাতায় নিয়ে আসতে চায়। কুন্দ আত্মহত্যা করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়। হরিদাসী বৈষ্ণবীর ঘটনায় সূর্যমুখী কর্তৃক অপমানিতা হয়ে কুন্দ গৃহত্যাগ করেন। তার অদর্শনে নগেন্দ্র অস্থির এবং সূর্যমুখীর প্রতি রুষ্ট হন। তিনি গৃহত্যাগের সংকল্প করেন। এমতাবস্থায় কুন্দ ফিরে এলে সূর্যমুখী নিজের উদ্যোগে স্বামীর সঙ্গে কুন্দের বিবাহ দেন। তারপর নিজে গৃহত্যাগ করেন। নগেন্দ্রনাথ তাঁকে খুঁজতে সব জায়গায় লোক পাঠান, তিনি নিজেও বেরিয়ে পড়েন। এদিকে ঘুরতে ঘুরতে সূর্যমুখী রোগাক্রান্ত হন। শেষে এক ব্রহ্মচারীর শুশ্রুষায় সুস্থ হয়ে ওঠেন। ব্রহ্মচারীই নগেন্দ্রনাথকে সংবাদ পাঠান। পরে উভয়ের পুনর্মিলন ঘটে। নগেন্দ্রনাথ গৃহে ফিরে কুন্দর সঙ্গে দেখা না করায় কুন্দ বিষপান করে। পরদিন সকালে সূর্যমুখী যখন কুন্দকে দেখতে আসেন, তখন তার অন্তিম সময় আসন্ন। শেষে নগেন্দ্রনাথের পায়ে মাথা রেখে কুন্দ ইহলোক ত্যাগ করে।

Add a Comment