ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ বা The College of Fort William ছিল ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর-জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলি প্রতিষ্ঠিত একটি শিক্ষাকেন্দ্র। ১৮০০ সালের ১০ জুলাই কলকাতার লালবাজারে এই কলেজ স্থাপিত হয়। এই প্রতিষ্ঠানে সহস্রাধিক সংস্কৃত, আরবি, ফার্সি, বাংলা, হিন্দি ও উর্দু বই ইংরেজিতে অনূদিত হয়।

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য

লর্ড ওয়েলেসলি ভারতের গভর্ণর নিযুক্ত হওয়ার পর লক্ষ্য করলেন যে, বিলেত থেকে যেসব সিভিলিয়ান কর্মচারী এদেশে আসে, তারা এদেশের ভাষা না জানাতে শাষন কার্যে বিঘ্নতা দেখা দেয়। ফলে এই সমস্যা সমাধানের জন্য ১৮০০ সালের ৪ মে কলেজ প্রতিষ্ঠার আইন পাশ করে নেন। ১৭৯৯ সালের ৪মে ইংরেজরা টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে জয়লাভ করে। জয়টিকে স্মরণীয় করে রাখতে, এর প্রথম বার্ষিকীতে এই আইন পাশ করা হয়। একই বছর ১০ জুলাই গভর্ণর জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলি ও তার কাউন্সিলরদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কলকাতার লালবাজারের নিকটে ‘ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

বাংলা বিভাগ

১৮০১ সালের ২৪ নভেম্বরে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। (২৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) উইলিয়াম কেরীকে প্রধান অধ্যাপক করে এবং তার অধীনে ৬ জন সহকারী নিয়ে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলা বিভাগ চালু করা হয়। বিভিন্ন ভাষা শিক্ষাদানের জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়োগ করা হলেও সেযুগে কলকাতায় বাংলা শিক্ষা দেওয়ার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। সেযুগের ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা কেবল সংস্কৃত শিক্ষা করতেন। তাঁরা সংস্কৃতকে দেবভাষা মনে করতেন। বাংলা শিক্ষা তাঁরা করতেন না। কলেজ কর্তৃপক্ষ শ্রীরামপুরের ব্যাপটিস্ট মিশনের উইলিয়াম কেরীকে এই বিভাগে নিয়োগ করেন। কেরি মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারকে হেড পণ্ডিত, রামমোহন বাচস্পতিকে সেকেন্ড পণ্ডিত ও রামরাম বসুকে অন্যতম সহকারী পণ্ডিতের পদে নিয়োগ করেন।
এছাড়াও শ্রীপতি মুখোপাধ্যায়, পদ্মলোচন চূড়ামণি ও রাজিব লোচন মুখোপাধ্যায় সহ মোট ছয় জন সহকারী ছিল। ১৮১৮ সালের জুন মাসে এ কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক সংখ্যা দাড়ায় ১৫ জনে। উল্লেখ্য যে, উইলিয়াম কেরী এ কলেজের বাংলা, সংস্কৃত এবং মারাঠী ভাষার প্রধান ছিলেন।

কলেজের অবসায়ন

বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবদান অনস্বীকার্য। এ কলেজের হাত ধরেই বাংলা গদ্যের বিকাশ পর্বের যাত্রা শুরু হয়। আধুনিক যুগে বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পণ্ডিতদের রচিত সকল গ্রন্থ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। রাজা রামমোহন রায় ১৮১৫ সাল থেকে কলকাতায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে এবং বাংলা সাহিত্যের উন্নতি সাধনে সচেষ্ট হয়,অনেকে ১৮১৫ সালকে বাংলার পুনর্জাগরণের শুরু বলে মনে করেন। তখন থেকে এই কলেজের কার্যক্রম ও প্রভাব হ্রাস পেতে থাকে।

এসময়ে ব্রিটিশ শাসন দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে, তাদের প্রয়োজনের গতিপ্রকৃতিও পরিবর্তিত হয়। ১৮৩৫ সালে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ইংল্যান্ডে তাঁর গণনির্দেশনার শিক্ষানীতি ঘোষণা করেন। এই নীতির মূল লক্ষ্য ছিল প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক ক্রমবর্ধমান প্রয়োজনের দিকে দৃষ্টিপাত। তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের ডানা ছেঁটে দেন। এরপর ১৮৫৪ সালে ডালহৌসি প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে এই কলেজ ভেঙে দেন।

Add a Comment