শব্দের অর্থমূলক শ্রেণিবিভাগ

বিগত সালের BCS Preliminary- তে এখান থেকে প্রশ্ন এসেছে টি।

অর্থগতভাবে শব্দসমূহ তিন ভাগে বিভক্ত। (১৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) যথা-

ক. যৌগিক শব্দ।
খ. রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ
গ. যোগরূঢ় শব্দ

ক. যৌগিক শব্দ: যে সকল শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ একই রকম, সেগুলোকে যৌগিক শব্দ বলে। যেমন গায়ক = গৈ + ণক (অক) – অর্থ : গান করে যে। কর্তব্য = কৃ + তব্য – অর্থ : যা করা উচিত। বাবুয়ানা = বাবু + আনা – অর্থ : বাবুর ভাব। মধুর = মধু + র –অর্থ : মধুর মতো মিষ্টি গুণযুক্ত। দৌহিত্র = দুহিতা+ষ্ণ্য –অর্থ : কন্যার পুত্র, নাতি। চিকামারা = চিকা+মারা –অর্থ : দেওয়ালের লিখন।

খ. রূঢ়ি শব্দ: যে শব্দ প্রত্যয় বা উপসর্গযোগে মূল শব্দের অর্থের অনুগামী না হয়ে অন্য কোনো বিশিষ্ট অর্থ জ্ঞাপন করে, তাকে রূঢ়ি শব্দ বলে। যেমন—হস্তী=হস্ত + ইন, অর্থ-হস্ত আছে যার; কিন্তু হস্তী বলতে একটি পশুকে বোঝায়। গবেষণা (গো+এষণা) অর্থ- গরু খোঁজা। বর্তমান অর্থ ব্যাপক অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা।

এ রকম বাঁশি – বাঁশ দিয়ে তৈরি যে কোনো বস্তু নয়, শব্দটি সুরের বিশেষ বাদ্যযন্ত্র , বিশেষ অর্থে প্রযুক্ত হয়। তৈল – শুধু তিলজাত স্নেহ পদার্থ নয়, শব্দটি যে কোনো উদ্ভিজ্জ পদার্থজাত স্নেহ পদার্থকে বোঝায়। যেমন বাদাম-তেল। প্রবীণ – শব্দটির অর্থ হওয়া উচিত ছিল প্রকৃষ্ট রূপে বীণা বাজাতে পারেন যিনি। কিন্তু শব্দটি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বয়স্ক ব্যক্তি’ অর্থে ব্যবহৃত হয়। সন্দেশ – শব্দ ও প্রত্যয়গত অর্থে ‘সংবাদ’। কিন্তু রূঢ়ি অর্থে ‘মিষ্টান্ন বিশেষ। কুশ(এক প্রকার তৃণ) + অল = কুশল, যে হরণ করে= হরিণ, নিজ কন্যা = ঝি(চাকরানি), পাঞ্জাবের অধিবাসী = পাঞ্জাবি(এক ধরনের পোশাক) রাখে যে = রাখাল, এরকম আরও কিছু রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ যেমন- ফলাহার, কারচুপি, শুশ্রূষা, বৎস, কদর্য ইত্যাদি।

গ. যোগরূঢ় শব্দ: সমাস নিষ্পন্ন যে সকল শব্দ সম্পূর্ণভাবে সমস্যমান পদসমূহের অনুগামী না হয়ে কোনো বিশিষ্ট অর্থ গ্রহণ করে, তাদের যোগরূঢ় শব্দ বলে। এ জাতীয় শব্দ একই সাথে যৌগিক ও রূঢ় উভয় শব্দের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। তাই নাম হয়েছে যোগরূঢ়। যেমন পঙ্কজ – পঙ্কে জন্মে যা (উপপদ তৎপুরুষ সমাস)। শৈবাল, শালুক, পদ্মফুল প্রভৃতি নানাবিধ উদ্ভিদ পঙ্কে জন্মে থাকে। কিন্তু ‘পঙ্কজ’ শব্দটি একমাত্র ‘পদ্মফুল’ অর্থেই ব্যবহৃত হয়। তাই পঙ্কজ একটি যোগরূঢ় শব্দ।

রাজপুত – ‘রাজার পুত্র’ অর্থ পরিত্যাগ করে যোগরূঢ় শব্দ হিসেবে অর্থ হয়েছে জাতিবিশেষ। মহাযাত্রা – মহাসমারোহে যাত্রা অর্থ পরিত্যাগ করে যোগরূঢ় শব্দরূপে অর্থ ‘মৃত্যু’। জলধি – ‘জল ধারণ করে এমন’ অর্থ পরিত্যাগ করে একমাত্র ‘সমুদ্র’ অর্থেই ব্যবহৃত হয়। আদিত্য(অদিতির পুত্র বা সকল দেবতা) = সূর্য । আরও কিছু যোগরূঢ় শব্দ যেমন – দশানন, পরিবার, বহুব্রীহি, গোঁফখেজুরে, অসুখ ইত্যাদি।

  • অর্থগতভাবে বাংলা শব্দ কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণসহ লিখুন। (৩৮তম বিসিএস লিখিত)

Add a Comment