ভিয়েতনাম

Socialist Republic of Vietnam

ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়। জন সংখ্যার দিক থেকে Ho Chi Minh City দেশটির বৃহৎ শহর। Ho Chi Minh City এর পূর্বের নাম Saigon, বর্তমানেও এ নাম বহুল প্রচলিত।

ভিয়েতনামকে বলা হয়। The Tiger of Bicycle.
ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম একত্রিত হয় ১৯৭৬ সালে ২ জুলাই। এ যুদ্ধ অবসানের লক্ষে সাবে উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামের মধ্যে ১৭ অক্ষরেখাকে সীমারেখা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।

……………………………..
জ্ঞানের বিশ্বায়ন- জানা আবশ্যক, জানানো দায়বদ্ধতা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বনেতারা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জাতিসংঘ, বিশ্বের জাতিগুলোর মধ্যে শান্তি, সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য। যার অালোচনা চলেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন পুরোটা সময় ধরে। যুদ্ধ তো থামল। সবাই বলল, এটাই শেষ রক্তারক্তি। পৃথিবীতে এখন অাসবে অফুরন্ত শান্তি। শান্তির জোয়ারে ভেসে যাবে পাপাচার, হত্যা, লুণ্ঠন। মানুষের ধারণাগুলো ভুল হতে সময় লাগল না। একটা-দুটো তত্বকথার ভিত্তিতে পরাশক্তিরা বেপরোয়া হয়ে উঠল। ভুক্তভোগীদের চোখের পানি দিয়ে সাগর-মহাসাগর সৃষ্টি হতে থাকল। আসুন তত্বের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া প্রত্যক্ষ করি।

দীর্ঘ আট বছরের (১৯৪৬ থেকে ১৯৫৪ সাল) যুদ্ধ শেষে ভিয়েতনামীরা ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি লাভ করে। স্বাধীনতা প্রাপ্তির
আনন্দে তারা উদ্বেলিত হল । কিন্তু তাদের মধ্যে নতুন করে অশান্তি সৃষ্টির জন্য যে, বিষবৃক্ষ পুতে রেখে গিয়েছে সাম্রাজ্যবাদীরা, তা উপভোগ করার জন্য বেশী দিন অপেক্ষা করতে হল না। সম্রাজ্যবাদী ফ্রান্স তো চলে গিয়েছিল, কিন্তু ভিয়েতনামকে সাময়িকভাবে উত্তর ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম – এই দুই টুকরো করে দেয়া হয়েছিল। ভিয়েতনামের সাম্যবাদীরা যারা ফ্রান্সের বিরোধিতা করেছিল, তারা উত্তর ভিয়েতনামের নিয়ন্ত্রণ পায়। অন্যদিকে দক্ষিণ ভিয়েতনামে সাম্যবাদ-বিরোধী ভিয়েতনামিরা শাসন শুরু করে। উত্তর ভিয়েতনামের সাম্যবাদীরা একটি একত্রিত সাম্যবাদী ভিয়েতনাম গঠন করতে চাচ্ছিল।

এবার আমেরিকার অাগমন। যুক্তরাষ্ট্রের মদদ পুষ্ট দক্ষিন ভিয়েতনামের সরকার নিপীড়নমূলক আচরণ শুরু করে। আর এই নিপীড়নমূলক আচরণের প্রতিবাদে দক্ষিণ ভিয়েতনামে আন্দোলন শুরু হয় এবং ১৯৬০ সালে দক্ষিণ ভিয়েতনামের সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট গঠন করা হয়। ১৯৬০-এর দশকের শুরুতে ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়ে। মার্কিনীদের জড়িয়ে পরার কারন কী জানেন? মার্কিনীদের “ডমিনো তত্ত্ব” ।

ডমিনো তত্ত্ব। অামেরিকার রাজনীতিতে এটির সংযোজন হয় ১৯৫৪ সালের ৭ ই এপ্রিল। ডোয়াইড ডি. অাইজেনহাওয়ার (Dwight D. Eisenhower) এই তত্বের ব্যাখ্যা করেন ইন্দোনেশিয়ায় কমিউনিজমের উপস্থিতির ভিত্তিতে । পরবর্তিতে এটির নির্ধারণ হয় দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়া জন্য। পঞ্চাশের দশকে ইন্দোচীনে যখন একের পর এক রাষ্ট্রে সমাজতন্ত্রীদের প্রভাব প্রত্যক্ষ করা হচ্ছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র এই’ডমিনো তত্ত্ব’র কথা প্রচার করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল একটাই, সমাজতন্ত্রীদের ঠেকাতে সামরিক হস্তক্ষেপ। ডমিনো তত্ত্বে বলা হয়েছে, কোনো একটি রাষ্ট্রে যদি সমাজতন্ত্রীরা ক্ষমতাসীন হয়, তাহলে পাশের রাষ্ট্রটিও সমাজতন্ত্রীদের দখলে চলে যাবে।

এই তত্ত্বগুলোই সমগ্র বিশ্বে আগুন লাগানোর জন্য যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছিল। ধরতে গেলে, ১৯৫৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সংঘটিত একটি দীর্ঘমেয়াদী সামরিক সংঘাত চলে ভিয়েতনামে। এটি দ্বিতীয় ইন্দোচীন যুদ্ধ নামেও পরিচিত। যুদ্ধের একপক্ষে ছিল উত্তর ভিয়েতনামি জনগণ ও ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট এবং অন্যপক্ষে ছিল দক্ষিণ ভিয়েতনামি সেনাবাহিনী ও মার্কিন সেনাবাহিনী। শান্তি চুক্তির লক্ষ্যে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৩ সালের মধ্যে প্যারিসে প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে বেশ কিছু বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। একটির পর একটি ভেস্তে যায়। একদিকে সামরিক বাহিনী অন্য দিকে সাধারন জনগণ । এই যুদ্ধ যেন থামার নয়। তবুও, ২৩ জানুয়ারি, ১৯৭৩ সালে প্যারিসে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু, কিছুদিন পর উভয় পক্ষই চুক্তি ভঙ্গ করে। আবারও, রক্তপাত। ভুক্তভুগী সাধারন মানুষ। তৎকালীন সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার আলোচনা চালাতে থাকেন। অবশেষে, ১৩ জুন, ১৯৭৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং উত্তর ভিয়েতনাম যৌথভাবে প্যারিস চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বাক্ষর করে। শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জয়ী হতে পারেনি। এটা জোকস এখানে শুনিয়ে যাই, এই তথাকথিত শান্তি অালোচনার জন্য হেনরী কিসিঞ্জারকে এসময় শান্তি নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। মনে পড়ছে~
.
“সর্প হইয়া দর্শন কর, ওঝা হইয়া ঝাড়।”

১৯৭৫ সালে সাম্যবাদী শাসনের অধীনে দুই ভিয়েতনাম একত্রিত হয়। আমেরিকা জন্য যা ছিল চুড়ান্ত অস্বস্তির।১৯৭৬ সালে এটি সরকারীভাবে ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র নাম ধারণ করে। এই যুদ্ধে প্রায় ৩২ লক্ষ ভিয়েতনামি মারা যান। এর সাথে আরও প্রায় ১০ থেকে ১৫ লক্ষ লাও ও ক্যাম্বোডীয় জাতির লোক মারা যান। মার্কিনীদের প্রায় ৫৮ হাজার সেনা নিহত হন। যুদ্ধ যেন মৃত্যুর দূত হয়ে আসে।

সমাজের বেশীরভাগ যা চাইবে, সমাজ সেভাবেই চলবে। বর্গীরা যখন অযাচিত হস্তক্ষেপ করবে, তখন সমাজে বিশৃঙ্খলা বেড়ে যাবে। আমেরিকা যদি ১৯৬৫ সালে দক্ষিণ ভিয়েতনামে সৈন্য নিয়ে না আসত, ৭ম নৌবহরকে না পাঠাতো, হয়তো ওদের নিজেদের সমস্যা মেটাতো রক্তক্ষয় হতো না। আর যুদ্ধও এত লম্বা সময় ধরে চলত না।

From Zakir’s BCS Specials

Add a Comment