কম্পিউটার ভাইরাস(Computer Virus)

মুলকথাঃ VIRUS শব্দের পূর্ণরূপ হলো Vital Information Resources Under Siege. ভাইরাস একধরণের ম্যালওয়ার প্রোগ্রাম। ভাইরাস দুই ধরণের Non-Resident Virus & Resident Virus. ১৯৪৯ সালে কম্পিউটার বিজ্ঞানী জন ভন নিউম্যান প্রথম ভাইরাস সম্পর্কে আলোকপাত করেন। ১৯৮০ সালে ক্ষতিকারক ম্যালওয়ার প্রোগ্রামকে ভাইরাস হিসাবে নাম করণ করেন ফ্রেড কোহেন। ভাইরাসের বিধ্বংসী আচরণ প্রথম প্রকাশিত হয় ব্ৰেইন ভাইরাসের মাধ্যমে, ১৯৮৬ সালে।

প্রাণীদেহে ভাইরাস আক্রমণের মতোই এ ভাইরাসগুলো আমাদের আইসিটি যন্ত্রের ক্ষতি করে থাকে। VIRUS শব্দের পূর্ণরূপ হলো Vital Information Resources Under Siege যার অর্থ দাঁড়ায় গুরুত্বপূণর্ তথ্যসমূহ দখলে নেওয়া বা ক্ষতি সাধন করা। ১৯৮০ সালে এ নামকরণ করেছেন প্রখ্যাত গবেষক ‘ University of New Haven -এর অধ্যাপক ফ্রেড কোহেন (Fred Cohen)

কম্পিউটার ভাইরাস হলো এক ধরনের ক্ষতিকারক সফটওয়ার বা ম্যালওয়ার যা পুনরুৎপাদনে সক্ষম (Replicates Itself)এবং এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে সংক্ৰমিত হতে পারে ও ব্যবহারকারীর অজান্তে অন্যান্য সফটওয়ার প্রোগ্রামকে Modify করে। অনেকে ভুলভাবে ভাইরাস বলতে সব ধরনের ম্যালওয়্যারকে বুঝিয়ে থাকে, যদিও অন্যান্য ম্যালওয়ারের যেমন স্পাইওয়ার বা এডওয়্যারের পুনরুৎপাদন ক্ষমতা নেই। নানা ধরনের ক্ষতি করে থাকে। এর মধ্যে দৃশ্যমান ক্ষতি যেমন কম্পিউটারের গতি কমে যাওয়া, হাং হয়ে যাওয়া, ঘন ঘন রিবুট (Reboot) হওয়া ইত্যাদি। তবে, বেশিরভাগ ভাইরাসই ব্যবহারকারীর অজান্তে তার সিস্টেমের ক্ষতি করে থাকে। কিছু কিছু ভাইরাস সিস্টেমের ক্ষতি করে না, কেবল ব্যবহারকারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যেমন-এডওয়্যারের । সিআইএইচ (CIH) নামে একটি সাড়াজাগানো ভাইরাস প্রতিবছর ২৬ এপ্রিল সক্রিয় হয়ে কম্পিউটার হার্ডডিস্ককে ফরম্যাট করে ফেলতো। বর্তমানে এটি নিস্ক্রিয় রয়েছে। এ ভাইরাসটি তাইওয়ানের এক ছাত্র তৈরি করেছিল, যিনি বর্তমান 8troy নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী।

পুনরুৎপাদনের জন্য যেকোনো প্রোগ্রামকে অবশ্যই তার কোড চালাতে (execute) এবং মেমোরিতে লিখতে সক্ষম হতে হয়। যেহেতু, কেউ জেনে-শুনে কোনো ভাইরাস প্রোগ্রাম চালাবে না, সেহেতু ভাইরাস তার উদ্দেশ্য পূরণে একটি সহজ পদ্ধতি বেছে নেয়। যে সকল প্রোগ্রাম ব্যবহারকারী নিয়মিত চালিয়ে থাকেন। (যেমন লেখালেখির সফটওয়্যার-MS Office) সেগুলোর কার্যকরী ফাইলের পেছনে ভাইরাসটি নিজের কোডটি ঢুকিয়ে দেয়। যখন কোনো ব্যবহারকারী ওই কার্যকরী ফাইলটি চালায়, তখন ভাইরাস প্রোগ্রামটিও সক্রিয় হয়ে উঠে।

কাজের ধরনের ভিত্তিতে ভাইরাসকে দুইভাগে ভাগ করা হয়। কোনো কোনো ভাইরাস সক্রিয় হয়ে ওঠার পর, অন্যান্য কোন কোন প্রোগ্রামকে সংক্রমণ করা যায় সেটি খুঁজে বের করে। তারপর সেগুলোকে সংক্ৰমণ করে এবং পরিশেষে মূল প্রোগ্রামের কাছে নিয়ন্ত্রণ দিয়ে নিস্ক্রিয় হয়ে যায়। এগুলোকে বলা হয় অনিবাসী ভাইরাস (Non-Resident Virus). অন্যদিকে, কোনো কোনো ভাইরাস সক্রিয় হওয়ার পর মেমোরিতে স্থায়ী হয়ে বসে থাকে। যখনই অন্য কোনো প্রোগ্রাম চালু হয়, তখনই সেটি সেই প্রোগ্রামকে সংক্ৰমিত করে। এ ধরনের ভাইরাসকে বলা হয় নিবাসী ভাইরাস (Resident Virus)।

কম্পিউটার ভাইরাস ইতিহাস
কম্পিউটার ভাইরাস, প্রোগ্রাম লেখার অনেক আগে ১৯৪৯ সালে কম্পিউটার বিজ্ঞানী জন ভন নিউম্যান এ বিষয়ে আলোকপাত করেন। তার স্ব-পুনরুৎপাদিত প্রোগ্রামের ধারণা থেকে ভাইরাস প্রোগ্রামের (তখন সেটিকে ভাইরাস বলা হতো না) আবির্ভাব। পুনরুৎপাদনশীলতার জন্য এই ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রামকে ভাইরাস হিসেবে প্রথম সম্বোধন করেন আমেরিকার কম্পিউটার বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক বি কোহেন। জীবজগতে ভাইরাস পোষক দেহে নিজেই পুনরুৎপাদিত হতে পারে। ভাইরাস প্রোগ্রামও নিজের কপি তৈরি করতে পারে।

সত্তর দশকেই, ইন্টারনেটের আদি অবস্থা, আরপানেট (ARPANET)-এ ক্রিপার ভাইরাস নামে একটি ভাইরাস চিহ্নিত করা হয়। সে সময় রিপার (Reaper) নামে আর একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হয়, যা ক্রিপার ভাইরাসকে মুছে ফেলতে পারত। সে সময় যেখানে ভাইরাসের জন্ম হতো সেখানেই সেটি সীমাবদ্ধ থাকত।
১৯৮২ সালে এলক ক্লোনার (ELK CLONER) ফ্লপি ডিস্ক ব্যবহারের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। তবে, ভাইরাসের বিধ্বংসী আচরণ প্রথম প্রকাশিত হয় ব্ৰেইন ভাইরাসের মাধ্যমে, ১৯৮৬ সালে। পাকিস্তানি দুই ভাই লাহোরে এই ভাইরাস সফটওয়্যারটি তৈরি করেন। এর পর থেকে প্রতিবছরই সারাবিশ্বে অসংখ্য ভাইরাসের সৃষ্টি হয়। বিশ্বের ক্ষতিকারক ভাইরাস ও ম্যালওয়্যারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ব্ৰেইন, ভিয়েনা, জেরুজালেম, পিংপং, মাইকেল এঞ্জেলো, ডার্ক এভেঞ্জার, সিআইএইচ ( অপর নাম চেরনোবিল), অ্যানাকুর্নিকোভা, কোড রোড ওয়ার্ম, নিমডা, ডাপরোসি ওয়ার্ম ইত্যাদি।

Add a Comment