কম্পিউটার ম্যালওয়্যার(Computer Malware)

কম্পিউটারে সাধারণত দুই ধরনের সফটওয়ার থাকে-
1. Operating System { Windows(10, 8.1, 7); Linux, MAC etc}
2. Application Software {MS Office, Adobe Photoshop, PDF Reader etc. }

এমনভাবে প্রোগ্রামিং কোড লেখা সম্ভব, যা এ সকল সফটওয়্যারের কাজে বিঘ্ন ঘটাতে পারে, বিভিন্ন হার্ডওয়্যারের সফটওয়্যার ইন্টারফেস বিনষ্ট করতে পারে, এমনকি সম্পূর্ণ কম্পিউটারের কার্যক্ষমতাকেও নষ্ট করে ফেলতে পারে। যেহেতু এ ধরনের প্রোগ্রামিং কোড বা প্রোগ্রামসমূহ কম্পিউটারের জন্য ক্ষতিকর, তাই এ ধরনের সফটওয়্যারকে বলা যেতে পারে ক্ষতিকারক সফটওয়্যার বা মেলিসিয়াস (Malicious) সফটওয়্যার। Malware শব্দটি এসেছে Malicious এর Mal আর Software এর ware থেকে।

ম্যালওয়্যার এক ধরনের সফটওয়্যার, যা কিনা অন্য সফটওয়্যারকে কাঙিক্ষত কর্মসম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে। আর এ বাধা অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যার বা এপ্লিকেশন সফটওয়্যার উভয়ের জন্যই হতে পারে। শুধু যে বাধার সৃষ্টি করে তা নয়, কোনো কোনো ম্যালওয়্যার ব্যবহারকারীর কম্পিউটারে রক্ষিত তথ্য চুরি করে। কোনো কোনো সময় ব্যবহারকারীর অজান্তে তার কম্পিউটার সিস্টেমের প্রবেশাধিকার লাভ করে। ম্যালওয়্যার প্রোগ্রামিং কোড, স্ক্রিপ্ট, সক্রিয় তথ্যাধার কিংবা অন্যান্য সফটওয়্যারের মতো প্রকাশিত হতে পারে। অন্যভাবে বলা যায়, কম্পিউটারে অনুপ্ৰবেশকারী বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর সফটওয়্যারের সাধারণ নামই হলো ম্যালওয়ার।

ম্যালওয়ারের প্রকারভেদ
প্রচলিত ও শনাক্তকৃত ম্যালওয়্যারসমূহের মধ্যে নিম্নোক্ত তিন ধরনের ম্যালওয়্যার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়
ক. কম্পিউটার ভাইরাস
খ. কম্পিউটার ওয়ার্ম
গ. ট্রোজান হর্স

ক. কম্পিউটার ভাইরাস
কম্পিউটার ভাইরাস ও ওয়ার্মের মধ্যে আচরণগত পার্থক্যের চেয়ে সংক্রমণের পার্থক্যকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কম্পিউটার ভাইরাস হলো এমন একধরনের ম্যালওয়ার যা কোনো কার্যকরী ফাইলের (Executable File) সঙ্গে যুক্ত হয়। যখন ওই প্রোগ্রামটি (এক্সিকিউটিবল ফাইল) চালানো হয়, তখন ভাইরাসটি অন্যান্য কার্যকরী ফাইলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংক্ৰমিত হয়। এ সম্পর্কে আরও জানতে

খ. কম্পিউটার ওয়ার্ম
অন্যদিকে কম্পিউটার ওয়ার্ম সেই প্রোগ্রাম, যা কোনো নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্যান্য কম্পিউটারকেও সংক্ৰমিত করে। অর্থাৎ কম্পিউটার ভাইরাস ব্যবহারকারীর হস্তক্ষেপ ছাড়া (আজান্তে হলেও) ছড়িয়ে পড়তে পারে না। যেমন, কোন পেনড্রাইভে কম্পিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত কোন ফাইল থাকলেই তা ছড়িয়ে পড়তে পারে না। যদি কোন কম্পিউটারে সেই পেনড্রাইভ যুক্ত করে ব্যবহার করা হয় তাহলেই কেবল পেনড্রাইভের ভাইরাসটি সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে।

Hacker getting into your file/Folder
Hacker getting into your file/Folder

অন্যদিকে, ওয়ার্ম নিজে থেকেই নেটওয়ার্ক থেকে নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়ে এবং নেটওয়ার্কের কম্পিউটারকে আক্রান্ত করে। এবং নেটওয়ার্কের কোন না কোনো ক্ষতি করে। যেমন সে কমপক্ষে ব্যবহারকারীর ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে ব্যবহার কারীর ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেয়। আর কম্পিউটার ভাইরাস টার্গেটেড কম্পিউটারের ফাইলকে নষ্ট করে বা মডিফাই করে।

কয়েকটি ওয়ার্ম
১) বিশ্বের প্রথম ওয়ার্মগুলোর মধ্যে Morris worm অন্যতম। এটি নভেম্বর ২, ১৯৮৮ সালে অবমুক্ত করা হয়। এটি শখের বসে তৈরি করা হয়েছিল।

২) ILOVEYOU or Love bug or Love Letter নামে একটি ওয়ার্ম ৫ মে, ২০০০ সালে ফিলিপাইনে ছড়িয়ে পড়ে ও দশ মিলিয়ন কম্পিউটারকে আক্রমন করে। এটি মেইল এর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল।

৩) র‍্যানসামওয়ার (Ransomware) একধরনের ম্যালওয়ার, যা কম্পিউটারে প্রবেশ করে কম্পিউটারকে লক করে দেয়, বা ফাইল কে Encrypt করে, অনেক সময় ফাইলকে Open করতে ও দেয় না। এগুলো সাধারণত মেইলের অ্যাটাচমেন্ট হিসাবে আসে বিভিন্ন প্রলুব্ধকর অফার নিয়ে, যেমন- ‘আপনি লটারীতে এক কোটি টাকা পেয়েছেন’, ‘অমুক নায়িকার (অশ্লীল) ভিডিও দেখুন’, ‘মোবাইলের সিম দিয়ে ফ্রিতে কথা বলুন’ ইত্যাদি। আর কম্পিউটারকে আনলক, বা ফাইলকে Decrypt করতে, ফাইলকে আগের অবস্থায় ফিরে দেওয়ার জন্য হ্যাকাররা মুক্তিপণ(Ransome) দাবি করে। এক্ষেত্রে হ্যাকাররা Bit Coin বা Ukash এর মাধ্যমে Ransome গ্রহণ করে, তাই তাদেরকে Trace করা যায় না এবং ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। So মেইল ওপেন করার আগে বা অ্যাটাচমেন্ট এ ক্লিক করার আগে ভেবে চিন্তে করবেন। আলোচিত একটি র‍্যানসামওয়ারের নাম Wanna Cry.

গ. ট্রোজান হর্স
ক্ষতিকর সফটওয়্যারের উদ্দেশ্য তখনই সফল হয়, যখন কিনা সেটিকে ক্ষতিকারক সফটওয়্যার হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। এজন্য অনেক ক্ষতিকারক সফটওয়্যার ভালো সফটওয়্যারের ছদ্মাবরণে নিজেকে আড়াল করে রাখে। ব্যবহারকারী সরল বিশ্বাসে সেটিকে ব্যবহার করে। এটি হলো ট্রোজান হর্স বা ট্রোজানের কার্যপদ্ধতি।

যখনই ছদ্মবেশী সফটওয়্যারটি চালু হয় তখনই ট্রোজান টি কার্যকর হয়ে ব্যবহারকারীর ফাইল ধ্বংস করে বা নতুন নতুন ট্রোজান আমদানি করে। গ্রিক উপকথার সাথে মিল রেখে এর এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। ট্রয়ের যুদ্ধে গ্রিকরা একটি কাঠের ঘোড়া বানিয়ে তার মধ্যে লুকিয়ে পরে। ট্রয়বাসী যখন এসে দেখে যে গ্রিকরা নেই, কিন্তু একটি সুন্দর ঘোড়া দাঁড়িয়ে আছে। সেই ঘোড়াটিকে তারা তাদের প্রাসাদে নিয়ে আসে। রাতের আধারে গ্রিকরা ঘোড়া থেকে বেড়িয়ে আক্রমণ করে ও ট্রয় নগরীকে ধ্বংস করে।

Add a Comment