শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

বিগত সালের BCS Preliminary- তে এখান থেকে প্রশ্ন এসেছে টি।

বুদ্ধিজীবী কাদেরকে বলে?
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী যারা দৈহিক শ্রমের বদলে মানসিক শ্রম বা বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রম দেন তারাই বুদ্ধিজীবী। বাংলা একাডেমী প্রকাশিত শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ গ্রন্থে (১৯৯৪) বুদ্ধিজীবীদের যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে তা হলো: বুদ্ধিজীবী অর্থ লেখক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পি, কন্ঠশিল্পি, সকল পর্যায়ের শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, রাজনীতিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, ভাস্কর, সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী, চলচ্চিত্র ও নাটকের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, সমাজসেবী ও সংস্কৃতিসেবী।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস বাংলাদেশে পালিত একটি বিশেষ দিবস। প্রতিবছর বাংলাদেশে ১৪ ডিসেম্বর দিনটিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করা হয় (19তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর সকল বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে।

জাতি সেদিন হারিয়েছিল আনোয়ার পাশা, জাহির রায়হান, শহীদুল্লা কায়সার, মুনীর চৌধুরী, আলতাফ মাহমুদ, গোবিন্দ চন্দ্র দেব, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আব্দুল জব্বার, সেলিনা পারভীন, সিরাজুদ্দীন হোসেন সহ আরও অনেক গুণী মানুষকে।

বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা কত?
‘নিউজ উইক’-এর সাংবাদিক নিকোলাস টমালিনের লেখা থেকে জানা যায়, শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা মোট ১ হাজার ৭০ জন। বাংলাপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী, একাত্তরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ৯৯১ জন ছিলেন শিক্ষাবিদ, ১৩ জন সাংবাদিক, ৪৯ চিকিৎসক, ৪২ আইনজীবী এবং ১৬ শিল্পী, সাহিত্যিক ও প্রকৌশলীসহ মোট ১১১১ জন

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি খোঁজার জন্য ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ডিসেম্বর থেকে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি। সারা দেশে প্রায় ৯৪২টি বধ্যভূমি শনাক্ত করতে পেরেছে তারা। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন প্রকাশিত পত্রিকা, এ বিষয়ক বিভিন্ন প্রবন্ধ-নিবন্ধ, গ্রন্থ, এবং মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবার এবং স্থানীয় লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে এসব বধ্যভূমি খুঁজে বের করা সম্ভব হয়েছে। প্রত্যেক বধ্যভূমিতে ফলক স্থাপনের পরিকল্পনা হচ্ছে। অধিকাংশ জেলাতেই মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভূমিগুলো হয় রেলের নয়তো সড়ক ও জনপথের আওতাভুক্ত জায়গায়।

বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, মিরপুর ঢাকা
বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, মিরপুর ঢাকা

শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে নির্মিত হয় বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। এটি ঢাকার মীরপুরে অবস্থিত। স্মৃতিসৌধটির স্থপতি মোস্তফা হালি কুদ্দুস। নির্মাণ করা হয় ১৯৭২ সালে । উদ্বোধন করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ২২ ডিসেম্বর ১৯৭২।

রায়ের বাজার বধ্যভূমি
রায়ের বাজার বধ্যভূমি

নাম জানা ও না জানা সকল বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ঢাকার রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নির্মাণ করা হয়েছে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ’। স্থপতি ফরিদউদ্দিন আহমেদে ও মো. জামী-আল সাফীর নকশায় নির্মিত এ স্মৃতিসৌধ ১৯৯৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বাংলাদেশ ডাকবিভাগ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে একটি স্মারক ডাকটিকিটের সিরিজ বের করেছে।

রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের তাৎপর্য
যেখানে মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায় সেখানে রায়েরবাজারের মূল ইটভাটা ছিল। সেখানে একটি প্রাচীর নির্মান করা হয় । প্রাচীর নিজেই দুঃখ ও দুঃখের গভীরতা প্রদর্শক, যার দুই প্রান্তেই নষ্ট হয়ে গেছে। দেয়ালের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে একটি বর্গাকার জানালা দিয়ে দর্শকরা আকাশ দেখতে পারে। প্রাচীরের সামনে পানির মধ্যে অবস্থিত একটি কালো গ্রানাইট স্তম্ভ যা বিষাদের প্রতিনিধিত্ব করে।

Add a Comment