সংসদীয় বা মন্ত্রীপরিষদ শাসিত সরকার

সংসদীয় সরকার কিভাবে গঠিত হয়? (৩৫তম বিসিএস লিখিত)

যে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় মন্ত্রিপরিষদ কর্তৃক শাসনকার্য পরিচালিত হয় এবং মন্ত্রিপরিষদ কাজের জন্য আইনসভার নিকট একক ও যৌথভাবে দায়ী থাকে, তাকে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার বা সংসদীয় সরকার বলা হয়। এই ধরনের শাসন ব্যবস্থায় প্রকৃত শাসক হল মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদের শীর্ষে থাকেন প্রধানমন্ত্রী। ব্রিটেন, ভারত, কানাডা, প্রভৃতি দেশে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীকে আইনসভার সদস্য হতে হয়। মন্ত্রিসভা সমষ্টিগতভাবে এর নীতি ও কাজের জন্য আইনসভার নিকট দায়ী থাকে। যতদিন আইনসভা মন্ত্রিপরিষদকে সমর্থন করে ততদিন মন্ত্রিপরিষদ ক্ষমতায় থাকে। আইনসভার অধিকাংশ সদস্য অনাস্থা জ্ঞাপন করলে মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হয়।

এ পদ্ধতিতে নামে মাত্র একজন রাষ্ট্রপ্রধান থাকেন- রাষ্ট্রপতি। প্রকৃত ক্ষমতা থাকে মন্ত্রীসভার কাছে। তবে বাংলাদেশের সকল ক্ষমতা ভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী, কেননা তিনি একই সাথে দলীয় প্রধান, সরকার প্রধান ও সংসদ নেতা।

সংসদীয় সরকারের বৈশিষ্টঃ

  • এখানে একজন নিয়ম তান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রধান থাকেন, যিনি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচিত হন অথবা, উত্তরাধিকার সূত্রে রাষ্ট্র প্রধান হন।
  • মন্ত্রীপরিষদের সদস্যরা আইন সভারও সদস্য। ফলে আইন সভার সাথে শাসন বিভাগের সুসম্পর্ক স্থাপিত হয়।
  • মন্ত্রীসভা যেহুতু একক ও যৌথভাবে আইন সভার নিকট দায়ী থাকেন। তাই এটি দায়িত্বশীল সরকার ব্যবস্থা
  • যদিও প্রধানমন্ত্রীকে বলা হয় First among the Equals(Primus inter pares), তারপরও তিনিই মন্ত্রিসভা, সংসদ ও দলের নেতৃত্ব দেন।
  • বলাই বাহুল্য যে এ ধরনের সরকার ব্যবস্থায় সংসদের প্রাধান্য থাকে।
  • আইনসভা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচিত হয়। কিন্তু সংকট কালে মেয়াদের পূর্বেই রাষ্ট্রপ্রধান সংসদ ভেঙ্গে দিতে পারেন।


মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের গুণ:

  • এ সরকারের প্রধান গুণ হল দায়িত্বশীলতা।
  • আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সদস্যরা মন্ত্রিসভা গঠন করে বলে আইনসভা ও শাসন বিভাগের মধ্যে বিরোধের সম্ভাবনা খুবই কম।
  • জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা শাসনকার্য পরিচালিত হয় বলে উৎকৃষ্ট আইন ও উন্নত ধরনের শাসন এই ব্যবস্থায় সম্ভবপর। যেখানে জনমতের প্রাধান্য থাকে।
  • এই ব্যবস্থায় মন্ত্রিসভা আইনসভার নিকট দায়ী থাকে বলে মন্ত্রীগণ স্বেচ্ছাচারী হতে পারে না। স্বেচ্ছাচারী হলে অনাস্থা জ্ঞাপক ভোটে মন্ত্রীগণ পদত্যাগ করতে বাধ্য থাকেন।
  • এ শাসন ব্যবস্থা সহজে পরিবর্তনীয়। মন্ত্রিসভা অযোগ্য হলে আইনসভা তাদের ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে।
  • আবার আইনসভা জনমতের বিরোধী হলে রাষ্ট্রপ্রধান মন্ত্রিসভার পরামর্শে আইনসভা ভেঙে দিতে পারেন। এই ব্যবস্থায় এভাবে ভারসাম্য বজায় রাখা যায়।
  • সংসদের কোণ দলই যদি সরকার গঠনের মত সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন না পায়, তখন কোয়ালিশন সরকার গঠনের মাধ্যমে সংকট নিরসন করা যায়।
  • এ ব্যবস্থায় বিরোধীদল ছায়া সরকার গঠন করে সরকারি দলের বিভিন্ন কাজের গঠনমূলক সমালোচনা করে। বিরোধী দলের কারনে সরকার ও জনকল্যাণমূলক কাজের প্রতি সচেষ্ট থাকে।

মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের ত্রুটি:

  • এ ধরনের শাসন ব্যবস্থায় দলীয় স্বেচ্ছাচারিতা দেখা যায়। বিশেষ করে প্রধান মন্ত্রী যখন অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী হয়।
  • যেকোনো সময় সরকার বা মন্ত্রিসভার পতন ঘটতে পারে বলে এর স্থায়িত্ব কম।
  • এজন্য শাসননীতির ও দীর্ঘমেয়াদী কাজে ধারাবাহিকতা এতে রক্ষিত হতে পারে না। তাই দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা করা সম্ভব হয় না।
  • জরুরি অবস্থায় ঐকমত্যের ভেতর দিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাও সম্ভব হয় না।
  • একটি রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করে বলে, তারা নিজ দলের অনুকূলে কাজ করে।


👉 Read More...👇

Add a Comment