রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি হওয়ার যোগ্যতা

  • বয়স ৩৫ বা তার অধিক হতে হবে।
  • সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য হবেন।
  • কখনও অভিশংসিত হন নি।
  • রাষ্ট্রপতি তাঁর কার্যভারকালে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হবার যোগ্য হবেন না, এবং কোন সংসদ-সদস্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে রাষ্ট্রপতিরূপে তাঁর কার্যভার গ্রহণের দিনে সংসদে তাঁর আসন শূন্য হবে।

শপথ ও ঘোষণা
সংবিধানের তৃতীয় তফসিল অনুসারে-
রাষ্ট্রপতিকে শপথ পাঠ করাতেন প্রধান বিচারপতি কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হওয়ার পর থেকে রাষ্ট্রপতিকে শপথ পাঠ করান স্পিকার।
রাষ্ট্রপতি যাদেরকে শপথ পাঠ করান- প্রধান মন্ত্রী ও মন্ত্রী পরিষদ, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার, প্রধান বিচারপতি।

রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব

  • রাষ্ট্রপতি স্বাধীনভাবে দুটি দায়িত্ব পালন করেন, সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন। অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করেন। তবে শর্ত থাকে যে, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোন পরামর্শদান করেছেন কি না এবং করে থাকলে কি পরামর্শ দিয়েছেন, কোন আদালত সেই সম্পর্কে কোন প্রশ্নের তদন্ত করতে পারবে না।
  • প্রয়োজন দেখা দিলে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন।
  • রাষ্ট্রপতি অ্যাটোর্নি জেনারেলকে নিয়োগ দেন ও তাঁর কাজের নির্দেশনা প্রদান করেন। অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের নিয়োগ করেন। রাষ্ট্রের শীর্ষ¯থানীয় কর্মকর্তাদের (মহাহিসাব রক্ষক, রাষ্ট্রদূত ও অন্যান্য উচ্চপদ¯থ কর্মকর্তা) নিয়োগের দায়িত্বও রাষ্ট্রপতির। তিনি সামরিক বাহিনীর প্রধান। তিন বাহিনীর (সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী) প্রধানদের তিনিই নিয়োগ দেন।
  • রাষ্ট্রপতি কিছু আইন প্রণয়নসংক্রান্ত কাজ করেন। তিনি জাতীয় সংসদের অধিবেশন আহ্বান করতে, স্থগিত রাখতে ও প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে ভেঙে দিতে পারেন। তিনি সংসদে ভাষণ দিতে ও বাণী পাঠাতে পারেন। সংসদ
    কর্তৃক গৃহীত কোনো বিল তার সম্মতি ছাড়া আইনে পরিণত হয় না।
  • রাষ্ট্রপতির সম্মতি ছাড়া কোনো অর্থ বিল সংসদে উত্থাপন করা যায় না। কোনো কারণে সংসদ কোনো ক্ষেত্রে অর্থ মঞ্জুর করতে অসমর্থ হলে রাষ্ট্রপতি ৬০ দিনের জন্য সংশ্লিষ্ট তহবিল হতে অর্থ মঞ্জুর করতে পারেন।
  • রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের সকল সম্মানের উৎস। তার অনুমতি ছাড়া দেশের কোনো নাগরিক অন্য কোনো দেশের দেওয়া কোনো সম্মান বা পদবি গ্রহণ করতে পারে না।
  • যুদ্ধ বা অন্য দেশ কর্তৃক আক্রান্ত হয়ে বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের কারণে দেশের নিরাপত্তা বা শান্তি বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম হলে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি প্রয়োজন হয়।
  • এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি আরও অনেক দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতীয় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের খেতাব, পদক ও সম্মাননা প্রদান করতে পারেন। বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় চুক্তি, দলিল তার নির্দেশে সম্পাদিতহয়। তিনি বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের নিয়োগপত্র গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী ও বিচারপতিদের শপথবাক্য পাঠ করান।

ক্ষমা প্রদর্শনের অধিকার
কোন আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যে−কোন দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করার এবং যে−কোন দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির আছেন।

রাষ্ট্রপতির কার্যভারকালে তাঁর বিরুদ্ধে কোন আদালতে কোন প্রকার ফৌজদারী কার্যধারা দায়ের করা বা চালু রাখা যাবে না এবং তাঁর গ্রেফতার বা কারাবাসের জন্য কোন আদালত হতে পরোয়ানা জারী করা যাবে না।

অনুপস্থিতি প্রভৃতির-কালে রাষ্ট্রপতি-পদে স্পীকার
রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে ক্ষেত্রমত রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কিংবা রাষ্ট্রপতি পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্পীকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন।

রাষ্ট্রপতির অভিশংসন
সংবিধান লংঘন বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসিত করা যেতে পারে; তার জন্য সংসদের মোট সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের স্বাক্ষরে অনুরূপ অভিযোগের বিবরণ লিপিবদ্ধ করে একটি প্রস্তাবের নোটিশ স্পিকারের নিকট প্রদান করতে হবে; স্পিকারের নিকট অনুরূপ নোটিশ প্রদানের দিন হতে চৌদ্দ দিনের পূর্বে বা ত্রিশ দিনের পর এই প্রস্তাব আলোচিত হতে পারবে না এবং সংসদ অধিবেশনরত না থাকলে স্পীকার অবিলম্বে সংসদ আহবান করবেন। অভিযোগ বিবেচনার পর মোট সদস্য-সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে অভিযোগ যথার্থ বলে ঘোষণা করে সংসদ কোন প্রস্তাব গ্রহণ করলে প্রস্তাব গৃহীত হবার তারিখে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হইবে।

অসামর্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতির অপসারণ
শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতিকে তাঁর পদ হতে অপসাণ করা যেতে পারে; তার জন্য সংসদের মোট সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের স্বাক্ষরে কথিত অসামর্থ্যের বিবরণ লিপিবদ্ধ করে একটি প্রস্তাবের নোটিশ স্পিকারের নিকট প্রদান করতে হবে। স্পিকার তখন একটি চিকিৎসা-পর্ষদ গঠনের প্রস্তাব আহ্বান করবেন। তারপর রাষ্ট্রপতিতে পর্ষদের নিকট পরীক্ষিত হবার জন্য উপস্থিত হওয়ার অনুরোধ জ্ঞাপক পত্র প্রেরণ করবেন। রাষ্ট্রপতি শারীরিক বা মানসিক ভাবে অসমর্থ, পর্ষদ এই মর্মে সংসদের নিকট মতামত পেশ করলে, সংসদের মোট সদস্য-সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে তাহা গৃহীত হলে প্রস্তাবটি গৃহীত হবার তারিখে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হবে।

রাষ্ট্রপতি-পদের মেয়াদ ও পদত্যাগ
রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ হতে পাঁচ বৎসরের মেয়াদে তাঁর পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। তবে শর্ত থাকে যে, রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তাঁর উত্তরাধিকারী-কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকবেন। একাদিক্রমে হউক বা না হউক-দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতির পদে কোন ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকবেন না।

স্পীকারের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে রাষ্ট্রপতি স্বীয় পদ ত্যাগ করতে পারবেন।