বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আঞ্চলিক বাণিজ্যে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। বর্তমানে এ বন্দর দিয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটানের পণ্য আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে। ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে সড়কপথে এ বন্দর দিয়ে বাণিজ্যের সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা।

Bangla Bandha Zero POint
Bangla Bandha Zero POint

বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়ায় অবস্থিত বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। ১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর নেপাল-বাংলাদেশ ট্রানজিট রুট হিসেবে এই স্থলবন্দর চালু করা হয়। ২০০৪ সালে এখানে ওয়্যারহাউস, ট্রাক রাখার স্থান ও এইচবি রোড, অফিস ভবন, পুলিশ ফাঁড়ি, সোনালী ব্যাংকের বুথ, ইমিগ্রেশন, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, বিদ্যুৎ-সুবিধা, পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন ইত্যাদি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এই স্থলবন্দরে বহির্গমন কার্যক্রম (ইমিগ্রেশন) চালু হয়।

দেশে বর্তমানে ২৩টি স্থলবন্দর রয়েছে। কিন্তু ভৌগোলিক কারণে বাংলাবান্ধা ভিন্ন মাত্রিক অবস্থানে রয়েছে। বাংলাবান্ধার বিপরীতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ফুলবাড়ী স্থলবন্দর। ফুলবাড়ী থেকে পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর শিলিগুড়ির দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার। শিলিগুড়ি থেকে রেল, আকাশ ও সড়কপথে ভারতের যেকোনো প্রান্তে যাতায়াতের সুবিধা রয়েছে। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে যাতায়াতের করিডর হচ্ছে শিলিগুড়ি। ফুলবাড়ী স্থলবন্দর থেকে দেড় ঘণ্টায় যাওয়া যায় নেপালের কাকরভিটা, ধূলাবাড়ি সীমান্তে। চার ঘণ্টায় যাওয়া যায় ভুটানের ফুন্টশিলিং শহরে। সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক পৌঁছাতে সময় লাগে পাঁচঘণ্টা। বাংলাবান্ধা থেকে নেপালের কাকরভিটার দূরত্ব ৫৯ কিলোমিটার, ভুটান সীমান্তের দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার এবং চীনের দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার।

কী কী পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়
ছোটখাটো কিছু সমস্যা সমাধান করা গেলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটনের কেন্দ্রবিন্দু হবে এই বন্দর। শুরুতে সীমিত আকারে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে। আমদানি-রপ্তানি চললেও এখন ব্যপ্তি বেড়েছে। বাংলাদেশ থেকে এ বন্দর দিয়ে পাট ও পাটজাত দ্রব্য, ফেব্রিকস, ওষুধ, যানবাহনের যন্ত্রাংশ, প্লাস্টিক পণ্য, ব্যাটারি, কোমল পানীয়, জুস, কেক, চিপস, চিনি, খাদ্যপণ্য নেপালে রপ্তানি হচ্ছে। ভারত-নেপাল থেকে চাল, মসুর ডাল, গম, ভুট্টা, চিরতা, আদা, চা কারখানার যন্ত্রাংশসহ অল্পসংখ্যক পণ্য আমদানি হচ্ছে। ভুটান থেকে আমদানি হচ্ছে বোল্ডার পাথর।

পরিধি বাড়ছে
২০১৩-১৪ অর্থবছরে এই স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা পণ্য থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ১৯ কোটি ৭৮ লাখ ২১ হাজার ৫০৬ টাকা। পণ্য আমদানি বাড়ায় পরের অর্থবছরে এই রাজস্ব আয় দাঁড়ায় ২৯ কোটি ৮২ লাখ ১০ হাজার ৭৮৬ টাকা।

আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৩৫ কোটি ৪০ লাখ ৩৪ হাজার টাকার রাজস্ব আয় হয়।

২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ইমিগ্রেশন চালুর পর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থলবন্দরটি দিয়ে। বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন ৩৭ হাজার ১২৩ জন। বাংলাদেশের বাইরে গেছেন ৩৯ হাজার ৬৩৫ জন।

সমস্যা
আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও যাত্রীদের ভাষ্যমতে, এই স্থলবন্দরে নিরবচ্ছিন্ন মুঠোফোন নেটওয়ার্ক নেই। ফলে প্রায় সময় যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের দেড়-দুই কিলোমিটার দূরে গিয়ে যোগাযোগ করতে হয়। বন্দর এলাকা থেকে নেই দূরপাল্লার পরিবহনব্যবস্থা। নেই মালামাল বহনের ট্রলিও। বাংলাবান্ধা থেকে ফুলবাড়ী এক কিলোমিটারের ওপরে। এক ইমিগ্রেশন কার্যালয় থেকে অন্যটিতে আসা-যাওয়ার পথে নেই কোনো যাত্রীছাউনি। আবাসিক ও খাবার হোটেল না থাকায় যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজটি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করে বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেড। স্থলবন্দরে পণ্যবাহী ট্রাকের মালামাল ওঠানো-নামানোর স্থান (ইয়ার্ড) সংকটের কারণে মহাসড়কের উভয় পাশে সারিবদ্ধভাবে ট্রাক দাঁড়িয়ে রাখতে হয়। ওয়্যারহাউস চত্বর এবড়োখেবড়ো ও খানাখন্দে ভরা। অনেক সময় এসব খানাখন্দে পণ্যবোঝাই ট্রাক পড়ে যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। আমদানি করা ভারী মালামাল তুলতে বন্দরে নেই ক্রেন। এখনো চালু হয়নি পণ্য স্ক্যান মেশিন। এলসি চালানের টাকা জমা দেওয়ার জন্য ব্যাংকের শাখা নেই।


👉 Read More...👇

Add a Comment