বাংলাদেশে বিনিয়োগ

বর্তমানে ডুয়িং বিজনেসে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯০টি দেশের মধ্যে ১৭৬তম। এ সূচকটি বিদেশি বিনিয়োগ টানার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে গণ্য করা হয়। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দুই অঙ্কে বা কমপক্ষে ৯৯তম অবস্থানে নিয়ে আসার লক্ষ্য ঠিক করেছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার জন্য কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছে বিডা। সে অনুযায়ী আইন, বিধি ও প্রক্রিয়ায় সংস্কার চলছে।

বিদেশি বিনিয়োগের প্রধান পাঁচ খাত

  • বস্ত্র ও পোশাক ৪২
  • ব্যাংকিং ২৮
  • টেলিযোগাযোগ ২৩
  • বিদ্যুৎ ১৬
  • খাদ্য ১১

২০১৬ সালে বিনিয়োগ হয় ২৩৩.৩ কোটি ডলার। বিনিয়োগ পরিবেশের অনেক উন্নয়ন সত্ত্বেও ২০১৭ সালে বিনিয়োগ হয় ২১৫.২ কোটি ডলার। বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট করতে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করা, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা, অবকাঠামো উন্নয়নের নানা উদ্যোগ এবং স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যেই দেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমল। তবে ২০১৭ সালে দেশে বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ নিবন্ধিত হয়েছে। এর সুফল আগামী কয়েক বছর পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এমনিতেই বাংলাদেশ কাঙ্খিত হারের চেয়ে কম পরিমাণে বিনিয়োগ পায়। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে না বাড়ায় মোট দেশজ উৎপাদনের(জিডিপি) তুলনায় বিনিয়োগের পরিমাণ ২৩ শতাংশ আটকে আছে। বিনিয়োগ না হলে দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান তৈরি হয় না। তাই রপ্তানি বৃদ্ধি, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও শিল্পের সক্ষমতা বাড়াতে বিদেশি বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।

পদক্ষেপ
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ(বেজা) ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্টায় কাজ করছে। সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলো সফলভাবে শেষ হলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। তবে এসবের প্রচার দরকার। দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়ন Country Branding করতে হবে।

বর্তমান সংস্কারঃ

বৈদ্যুতিক সংযোগঃ ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুৎ বিভাগ ২৮ দিনের মধ্যে উচ্চক্ষমতার ও সাত দিনের মধ্যে আবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎসংযোগ দেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করে। বিদ্যুৎসংযোগের আবেদন কোন পর্যায়ে আছে, তা জানার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ফলে আগে শিল্পকারখানায় বিদ্যুৎ পেতে যেখানে ৪০৪ দিন লাগত, এখন সেখানে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।

ভবন নির্মাণের অনুমতিঃ ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে আগে ২৭৮ দিন লাগত, এখন সেটা ৬০ দিনে মিলছে।

নামের ছাড়পত্রঃ বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) জানিয়েছে, কোম্পানি গঠনের শুরুতেই নামের ছাড়পত্র দেওয়া এবং নিবন্ধনপ্রক্রিয়া অনলাইন করা হয়েছে। বর্তমানে যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের দপ্তর (আরজেএসসি) থেকে আধা ঘণ্টার মধ্যেই নামের ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশে একক মালিকানার কোম্পানি গঠন সহজ করতে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

শেয়ার হস্তান্তরঃ শেয়ার হস্তান্তরের সময় যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের দপ্তরে হস্তান্তরকারীর সশরীরে উপস্থিতির প্রথা রহিত করা হয়েছে। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীর শেয়ার হস্তান্তরে ভোগান্তি দূর হয়েছে।

পণ্য খালাসঃ কাগজবিহীন বাণিজ্যের আওতায় স্বল্পসংখ্যক নথি যুক্ত করে আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের কার্যক্রম শেষ করা হচ্ছে। এনবিআর ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় নমুনা সরবরাহ ও দ্রুততার সঙ্গে পণ্য খালাসের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ই-সেবাঃ এ ছাড়া সাধারণ সভায় অনুমোদনের ৩০ দিনের মধ্যে শেয়ারমালিকদের লভ্যাংশ দেওয়ার বিধান করা হয়েছে। অনলাইনে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) নিবন্ধন চালু হয়েছে। এনবিআরের হিসাবে, ইতিমধ্যে প্রায় ১ লাখ প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নিয়েছে। ভ্যাট ও টিআইএন নিবন্ধনের তথ্যভান্ডারে আন্তসংযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে। বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর (বিআইএন) ইতিমধ্যে চালু হয়েছে।

তাই বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) বলছে, আগামী অক্টোবর মাসে প্রকাশিত হতে যাওয়া ডুয়িং বিজনেস ইনডেক্স-২০১৯-এ বাংলাদেশের অবস্থানের কিছুটা উন্নতি হতে পারে।

চীনঃ ২০১৬ সালে চীন থেকে প্রায় ১৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগ এসেছে। চীন থেকে আরও বিনিয়োগ আনতে কাজ করবে ‘স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক’। চীনে স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের বেশ সুনাম আছে। তাই এ কাজে তারা সেতুবন্ধ হিসাবে কাজ করবে।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কুনমিং আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি লিমিটেড বাংলাদেশের ইস্পাতশিল্পে ২৩০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থ ব্যয়ে তারা বছরে ২০ লাখ টন উৎপাদনক্ষমতার একটি স্টিল মিল প্রতিষ্ঠা করবে। এ জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) কুনমিং স্টিলকে প্রায় ১ হাজার একর জমি ইজারা দিচ্ছে।
কুনমিং স্টিল তাদের কারখানার কাজ ২০২২ সালের মধ্যে শেষ করে উৎপাদনে যেতে চায় বলে জানিয়েছে বেজা। বর্তমানে দেশের ছোট-বড় আড়াই শ মিলের ইস্পাত পণ্য উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ৯০ লাখ টন। বিপরীতে বছরে চাহিদা ৬০ লাখ টনের মতো। কুনমিং স্টিল ২০ লাখ টন ক্ষমতা নিয়ে উৎপাদনে এলে দেশের ইস্পাত খাতের সক্ষমতা আরও বাড়বে।

বাংলাদেশে করের হারঃ বাংলাদেশে এখনও কর্পোরেট করের হার বেশি। এটি কমাতে হবে। তবে রাতারাতি কমানো সম্ভব নয়। তাই বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হলে করনীতি নিয়ে সরকারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা থাকা উচিত।

বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিঃ বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ যেমন অবকাঠামোগত বাণিজ্য সুবিধা, করনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ের উন্নতি ঘটাতে হবে।

প্রতিযোগিতা সক্ষমতা

ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় বাংলাদেশ আগের চেয়ে এক ধাপ পিছিয়ে গেছে। গত অক্টোবর মাসে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচক বা গ্লোবাল কম্পিটিটিভ ইনডেক্সে (জিসিআই) প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বের ১৪০টি দেশের মধ্যে ১০৩ তম। আগেরবার বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০২ তম।

ডব্লিউইএফ বলছে, বাংলাদেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ১৬টি সমস্যা আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্নীতি। অন্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অবকাঠামো দুর্বলতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দক্ষ শ্রমিকের অভাব, ঋণপ্রাপ্তির অপর্যাপ্ত সুযোগ ও উচ্চ করহার।

পেপার ক্লিপিং
বিদেশি বিনিয়োগে ভাটার টান

Add a Comment