পৌরসভা

গ্রামে যেমন ইউনিয়ন পরিষদ, তেমনি শহরের জন্য রয়েছে পৌরসভা। বর্তমানে বাংলাদেশে ৩১৪টি পৌরসভা রয়েছে।

গঠন
স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ অনুযায়ী পৌরসভা গঠিত হবে একজন মেয়র, সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্ধারিত সংখ্যক ওয়ার্ডের সমানসংখ্যক কাউন্সিলর এবং কেবল মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত নির্ধারিত সংখ্যক কাউন্সিলরের সমন্বয়ে। এই সকল পদেই জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।

কার্যাবলি
পৌরসভা শহরের জনগণের স্থানীয় সমস্যার সমাধান এবং উন্নয়নমূলক কাজের দায়িত্ব পালন করে। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পৌরসভাকে অনেকগুলো কাজ করতে হয়। উল্লেখযোগ্য কাজগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।

১. পৌর এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উন্নয়নের জন্য অনুদান প্রদান, হোস্টেল নির্মাণ, মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র ও নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন, পাঠাগার স্থাপন করা ইত্যাদি কাজ করে।

২. পৌরসভা শহরের জনস্বাস্থরক্ষামূলক কার্যাদি সম্পন্ন করে। জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য রাস্তাঘাট, পুকুর, নর্দমা ও ডাস্টবিন নির্মাণ করে। সংক্রামক ও মহামারী ব্যাধি প্রতিরোধ ও প্রতিষেধক দানের ব্যবস্থা করে। হাসপাতাল, মাতৃসদন, শিশুসদন, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র নির্মাণ ও পরিচালনার ব্যবস্থা করে।

৩. মৃতদেহ সৎকারের জন্য গোরস্থান, শ্মশান ইত্যাদি নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করে। অনাথ ও দুঃস্থদের জন্য এতিমখানা ও আশ্রম নির্মাণ করে।

৪. জনগণের জন্য নিরাপদ খাওয়ার পানির ব্যবস্থা এবং আবদ্ধ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে।

৫. পৌর এলাকার জনগণের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য পৌরসভা নৈশপ্রহরী নিয়োগ করে। অপরাধমূলক ও বিপজ্জনক খেলা ও পেশা নিয়ন্ত্রণ করে।

৬. পৌরসভা এলাকার পরিবেশ উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য রাস্তার ধারে বৃক্ষরোপণ ও বন সংরক্ষণ করে। জনগণের বিনোদনের জন্য পার্ক ও উদ্যান নির্মাণ, মিলনায়তন স্থাপন এবং উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ সংরক্ষণ করে।

৭. পৌর এলাকায় গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি পালন, খামার স্থাপন, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, গবাদি পশু বিক্রি ও রেজিস্ট্রিকরণ, বিপজ্জনক পশু আটক ও হত্যা, পশুর মৃতদেহ অপসারণ ইত্যাদি কাজ করে।

৮. খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে, পচা ও ভেজাল খাবার বিক্রি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। মাদকজাতীয় খাদ্য ও পানীয় অবাধে বিক্রি বন্ধের জন্য এসব দ্রব্য প্রস্তুত, ক্রয়-বিক্রয় এবং সরবরাহের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে। বিধিনিষেধ লঙ্ঘনকারীকে শাস্তি দেয়।

৯. পরিকল্পিত শহর গড়ার জন্য পৌরসভা বাড়িঘর নির্মাণের অনুমতি দেয়। অননুমোদিত ও বেআইনি নির্মাণ ভেঙে দেয়।

১০. সুপরিকল্পিত সুন্দর শহর গড়া এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য পৌরসভা মহাপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে।

১১. পৌরসভা যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে এবং মোটরগাড়ি ছাড়া অন্যান্য যানবাহনের লাইসেন্স প্রদান করে।

১২. প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পৌরসভা দুর্গতদের সাহায্য, সেবা এবং ত্রাণের ব্যবস্থা করে।

১৩. পৌরসভা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষার জন্য সন্ত্রাস দমন ও শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

১৪. পৌরসভা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা মূল্য জড়িত দেওয়ানি ও ছোটখাটো ফৌজদারি মামলার বিচার করতে পারে। এজন্য মেয়র ও চারজন কাউন্সিলরের সমন্বয়ে আদালত গঠন করা হয়।

আয়ের উৎস
বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে পৌরসভা তার ব্যয়ভার নির্বাহ করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-
ঘরবাড়ি, দোকানপাট, বিদ্যুৎ, পানি ও অন্যান্য সেবা এবং বিনোদনমূলক বিষয়ের উপর ধার্য কর, মার্কেট ভাড়া, হাট-বাজার ও খেয়াঘাট ইজারা, লাইসেন্স-পারমিট, যানবাহন রেজিস্ট্রেশন ফি, সরকারি বরাদ্দ ইত্যাদি।


👉 Read More...👇