আইন বিভাগ কাকে বলে?

সরকারের তিনটি মূল কাজ পরিচালনার জন্য তিনটি অঙ্গ বা বিভাগ রয়েছে। যেমনশাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। শাসন বিভাগের মূল কাজ হল আইনানুসারে শাসনকাজ পরিচালনা করা। আইন বিভাগের মূল কাজ হল নতুন আইন প্রণয়ন ও পুরাতন আইন সংশোধন করা। আর বিচার বিভাগের মূল কাজ হল আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বিচারকাজ সম্পাদন করা।

আইন বিভাগ

আইন বিভাগ সরকারের যে বিভাগ আইন প্রণয়ন, পুরাতন আইনের সংশোধন ও পরিবর্তন করে তাকে আইন বিভাগ বলে। বিভিন্ন দেশে আইনসভার বিভিন্ন নাম হতে পারে। যেমন- বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কংগ্রেস, ব্রিটেনে পার্লামেন্ট ইত্যাদি।

আইন বিভাগের গঠন

বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে আইন বিভাগ গঠিত হয়ে থাকে। কোনো দেশের আইনসভা এক-কক্ষবিশিষ্ট আবার কোনো দেশের আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। বাংলাদেশের আইনসভা এক-কক্ষবিশিষ্ট। গ্রেট ব্রিটেনের আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। এক-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা সাধারণত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নিয়ে গঠিত হয়। তবে বিশেষ কারণে বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য মনোনয়ন দানের ব্যবস্থাও থাকতে পারে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার নিম্নকক্ষ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয়। যেমন- ভারতের লোকসভা, ব্রিটেনের কমন্স সভা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ ইত্যাদি। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার উচ্চ কক্ষ বিভিন্ন ধরনের সদস্য নিয়ে গঠিত হতে পারে। যেমন- উত্তরাধিকার সূত্রে, আজীবন সদস্যরূপে, প্রত্যক্ষ নির্বাচন ও পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে।

আইনসভার মেয়াদ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম। যেমন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চার বছর, বৃটেনের পাঁচ বছর। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের কার্যকাল পাঁচ বছর।

আইন সভার কার্যাবলি

আইন প্রণয়ন ছাড়া আইন বিভাগ বহুবিধ কাজ করে থাকে। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হল।

(ক) আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত: দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সুষ্ঠুভাবে প্রশাসন পরিচালনার জন্য আইনসভা নতুন নতুন আইন প্রণয়ন ও প্রচলিত আইনের পরিবর্তন ও সংশোধন করে।

(খ) সংবিধান সংক্রান্ত: কোনো কোনো দেশে আইনসভা গণপরিষদ হিসেবে দেশের জন্য সংবিধান রচনা করে। বাংলাদেশের আইনসভা ১৯৭২ সালে সংবিধান রচনা করেছে। তাছাড়া আইনসভা সংবিধান সংশোধনও করতে পারে।

(গ) জনমত গঠন সংক্রান্ত: আইনসভা জনমত গঠনের অন্যতম বাহক। আইনসভার সদস্যগণ সংসদের ভিতরে ও বাইরে সরকারি কাজের সমালোচনা, আললাচনা ও বিতর্কের মাধ্যমে জনগণকে প্রকৃত অবস্থা অবহিত করে। এসব আলোচনা ও বিতর্ক থেকে জনগণ তাদের করণীয় কী তা স্থির করে। এভাবে দেশে জনমত গঠিত হয়।

(ঘ) শাসন বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ: কোনো কোনো দেশের আইন বিভাগ সন্ধি ও চুক্তি সম্পাদন, যুদ্ধ ঘোষণা, উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগের অনুমোদন দান ইত্যাদি শাসন সংক্রান্ত কাজ করে থাকে। তাছাড়া প্রশ্ন জিজ্ঞাসা, বিতর্ক, আলোচনা, মুলতবি প্রস্তাব, নিন্দা প্রস্তাব ও অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে আইনসভা শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে। সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় মন্ত্রিসভা সর্বতোভাবে আইনসভার নিকট জবাবদিহি করে। অনাস্থা আনলে মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হয়।

(ঙ) বিচার সংক্রান্ত: আইনসভা কিছু বিচার সংক্রান্ত কাজও করে। আইনসভা তার সদস্যদের অসদাচারণের বিচার করে সদস্যপদ বাতিল করতে পারে। অভিযুক্তকরণের মাধ্যমে রাষ্ট্রপ্রধান, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বিচারপতিদের অপসারণ করতে পারে। ব্রিটেনের লর্ডসভা আপিল বিচারের সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে কাজ করে।

(চ) অর্থ সংক্রান্ত: আইনসভা দেশের জাতীয় তহবিলের অভিভাবক। আইনসভার অনুমোদন ব্যতীত বাজেট পাশ হয় এবং কর ধার্য করা যায় না। অতএব আইন বিভাগ আইন সংক্রান্ত কাজ ছাড়াও বহুবিধ কাজ সম্পাদন করে।

Add a Comment