অস্থায়ী সংবিধান আদেশ

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত নয় মাসব্যাপী(৮ মাস ২২ দিন) যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পর ২২শে ডিসেম্বর ১৯৭২ সালে মিত্র বাহিনীর সরকার ঢাকায় ক্ষমতা গ্রহণ করে,(মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে যাঁরা অবস্থান করতেছিলেন তাঁরা ২২ ডিসেম্বর ঢাকায় আসেন) যে সরকার ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল, মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় ইউসুফ আলীর শপথ বাক্য পাঠের মধ্য দিয়ে গঠিত হয়েছিল। এরপর স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। এরপর তিনি ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারিতে অস্থায়ী শাসনতান্ত্রিক আদেশ জারী করেন। সেই আদেশে যা ছিল তা নিম্নরুপঃ

যেহেতু ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিলের স্বাধীনতা-ঘোষণাপত্র আদেশের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের শাসন পরিচালনার জন্য অস্থায়ী বিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল, এবং যেহেতু উক্ত ঘোষণাপত্র রাষ্ট্রপ্রধানের সকল নির্বাহী ও আইন প্রণয়নগত ক্ষমতা এবং একজন প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছিল, এবং যেহেতু উক্ত ঘোষণাপত্রে বর্ণিত অন্যায় ও বিশ্বাসঘাতকতামুলক যুদ্ধের অবসান বর্তমানে ঘটেছে, এবং যেহেতু উক্ত লক্ষ্য অনুযায়ী এক্ষেত্রে অবিলম্বে কতগুলো বিধান প্রণয়ন করা প্রয়োজন, সেহেতু এক্ষনে, রাষ্ট্রপতি অনুগ্রহপুর্বক ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিলের স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র আদেশ এবং এতদুদ্দেশ্যে তাকে প্রদত্ত সকল ক্ষমতা অনুসারে নিম্নোক্ত আদেশ প্রণয়ন ও জারি করেছেন।

১। এই আদেশ বাংলাদেশ অস্থায়ী সংবিধান আদেশ, ১৯৭২ নামে অভিহিত হবে।

২। এটি সমগ্র বাংলাদেশে প্রযোজ্য হবে।

৩। এটি অবিলম্বে বলবৎ হবে।

৪। সংজ্ঞাঃ এই আদেশে বর্ণিত গণপরিষদ বলতে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর ও ১৯৭২ সালের জানুয়ারী এবং ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের আসনগুলোতে বিজয়ী এবং আইনের দ্বারা বা অধীনে অন্যদিক দিয়ে অযোগ্য বিবেচিত নন, বাংলাদেশের এমন সকল নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিকে নিয়ে গঠিত পরিষদকে বুঝাবে।

৫। বাংলাদেশে একটি মন্ত্রীপরিষদ থাকবে এবং প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীপরিষদের প্রধান থাকবেন।

৬। রাষ্ট্রপতি তাঁর সকল দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন।

৭। রাষ্ট্রপতি গণপরিষদে এমন একজন সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করবেন, যিনি গণপরিষদের সংখ্যাগরিষ্ট সদস্যের আস্থা ভোগ করেন। অন্য সকল মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন।

৮। গণপরিষদ কর্তৃক সংবিধান প্রণিত হওয়ার পুর্ববর্তী কোন সময়ে রাষ্ট্রপতির পদ শুন্য হলে, মন্ত্রিপরিষদ বাংলাদেশের একজন নাগরিককে রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত করবেন। তিনি গণপরিষদ কর্তৃক প্রণীত সংবিধান অনুসারে অপর একজন রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহন না করা পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি পদে বহাল থাকবেন।

৯। বাংলাদেশের একটি হাইকোর্ট থাকবে। একজন প্রধান বিচারপতি ও সময়ে নিযুক্ত হতে পারেন এমন অন্যান্য বিচারকে নিয়ে হাইকোর্ট গঠিত হবে।

১০। বাংলাদেশ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির শপথ পাঠ পরিচালনা করবেন এবং রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীগনের শপথ-পাঠ পরিচালনা করবেন। শপথ বাক্যের ফরম মন্ত্রীপরিষদ কর্তৃক নির্ধারিত হবে।

শেখ মুজিবুর রহমান
রাষ্ট্রপতি, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।
১১ জানুয়ারি, ১৯৭২ ; ঢাকা, বাংলাদেশ।

Add a Comment