বাংলাদেশে শরনার্থী

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা: বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অধিবাসী যাদের অধিকাংশই ধর্মীয়গতভাবে মুসলিম, এরাই মূলত রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা সংকট বহু পুরনো, সেই মধ্যযুগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে এই অঞ্চলের মানুষের ওপর নির্যাতন হয়ে আসছে। কখনো মগদের আক্রমণ, কখনো জাপানি সেনাদের অত্যাচার আবার কখনো সরকার বাহিনীর নিপীড়নের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা নিজেদের রাজ্য ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। বাংলাদেশি সীমান্ত কাছাকাছি হওয়ায় বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে আসা প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় পেয়েছে বাংলাদেশে।

জাতিসংঘ এ অভিযানকে বলেছে গণহত্যার মত জাতিগত নিধন(ethnic cleansing) যা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী বা উদ্বাস্তু বলতে মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থী বা উদ্বাস্তুদের বুঝানো হয়ে থাকে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের হিসেব অনুযায়ী, ২৫ আগস্ট ২০১৭ সালে মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর দ্বারা শুরু হওয়া গণহত্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রায় ৬,৫৫,০০০ থেকে ৭,০০,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বিগত তিন দশক ধরে মায়ানমার সরকারের সহিংস নির্যাতন থেকে ৩,০০,০০০ এর অধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে অবস্থান করছে। তাছাড়া, ভারতের হায়দ্রাবাদের রোহিঙ্গারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছে, ফলে মায়ানমারের মতো তারাও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। বা তাদেরকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে বাধ্য করা হচ্ছে।

কুতুপালং শরনার্থী শিবির হল বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়ায় অবস্থিত একটি শরণার্থী শিবির, যেখানে প্রতিবেশী মায়ানমারে ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা মুসলিমরা আশ্রয় নিয়েছে।কক্সবাজারে বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত দুটি শরণার্থী শিবিরের মধ্যে এটি একটি, অন্যটি হচ্ছে টেকনাফে অবস্থিত নয়াপাড়া শরণার্থী শিবির।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন
মংডুতে রোহিঙ্গাদের বিরোধিতা করে রাখাইন রাজ্যের আইনসভা একটি আইন পাশ করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠিয়েছে। মিয়ানমারের সমাজ কল্যাণ ত্রাণ ও পূনর্বাসন মন্ত্রী আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সাথে সাক্ষাৎ করেছে। যদিও অনেকে এটাকে অতীতের মত কালক্ষেপণ এর মতই মনে করছে। অপরদিকে আইসিসির(International Criminal Court) প্রধান কৌঁসুলি ফাতৌ বেনসুদা রোহিঙ্গাদের তাড়ানোর ঘটনার তদন্তের জন্য আবেদন করেছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সাথে একটি দ্বিপাক্ষিক যুক্তি সই হয়। সে অনুযায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ১৮ সালের জানুয়ারিতে। কিন্তু দুই পক্ষের কিছু অমিমাংশিত বিষয়ের জন্য তা সম্ভব হয়নি। ১৪/০৪/২০১৮ তে প্রথম একটি রোহিঙ্গা পরিবারের স্থানান্তর ঘটে যদিও ইউএনএইচসিআর এর মত মিয়ানমার এখন প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত নয়। তাদের স্বইচ্ছায় প্রত্যাবাসন, নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা, নিরাপত্তা, স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির দাবি করে আসছে। কেননা সাত লক্ষ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার তাদের কোন পরিকল্পনা নেই। কিন্তু অতি দুঃখ ও ক্ষোভের বিষয় হল যে, মিয়ানমার সে পরিবারটিকে no man’s land এ স্থানন্তর করেছে।

Add a Comment