সৈয়দ শামসুল হক

সৈয়দ শামসুল হক
সৈয়দ শামসুল হক
সৈয়দ শামসুল হক (জন্মঃ ২৭ ডিসেম্বর ১৯৩৫) হলেন একজন বিখ্যাত বাংলাদেশী সাহিত্যিক। তিনি কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প তথা সাহিত্যের সকল শাখায় সাবলীল পদচারণার জন্য তাঁকে ‘সব্যসাচী লেখক’ বলা হয়। সব্যসাচী লেখক হিসেবে তাঁর পরিচিতি রয়েছে। সৈয়দ শামসুল হক মাত্র ২৯ বছর বয়সে বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান। বাংলা একাডেমী পুরস্কার পাওয়া সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে কম বয়সে এ পুরস্কার লাভ করেছেন।

সৈয়দ শামসুল হক এক ছেলে ও এক মেয়ের গর্বিত জনক। জনাব হক ব্যক্তিজীবনে প্রথিতযশা লেখিকা ডাঃ আনোয়ারা সৈয়দ হকের স্বামী। সৈয়দ শামসুল হকের ভাষ্য অনুযায়ী তাঁর রচিত প্রথম পদ তিনি লিখেছিলেন এগারো-বারো বছর বয়সে। টাইফয়েডে শয্যাশায়ী কবি তাঁর বাড়ীর রান্নাঘরের পাশে সজনে গাছে একটি লাল টুকটুকে পাখি দেখে দুলাইনের একটি পদ “আমার ঘরে জানালার পাশে গাছ রহিয়াছে/ তাহার উপরে দুটি লাল পাখি বসিয়া আছে।” রচনা করেন। এরপর ১৯৪৯-৫০ সালের দিকে ম্যাট্রিক পরীক্ষার পরে ব্যক্তিগত খাতায় ২০০টির মতো কবিতা রচনা করেন। সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ১৯৫১ সালের মে মাসে। ফজলে লোহানী সম্পাদিত “অগত্যা” পত্রিকায়। সেখানে “উদয়াস্ত” নামে তাঁর একটি গল্প ছাপা হয়।

১৯৫৬ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস “দেয়ালের দেশ” প্রকাশিত হয় ।

রোকনুজ্জামান খান সম্পাদিত মাসিক ‘কচি ও কাঁচা’ এবং এখলাসউদ্দিন আহমদ সম্পাদিত মাসিক ‘টাপুর টুপুর’ পত্রিকার প্রায় নিয়মিত লেখক ছিলেন তিনি।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়েও আছে একাধিক কবিতা। এমনই একটি চিরায়ত কবিতা ‘মুজিব! মুজিব!’। পঁচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে লেখা ‘বৃষ্টি পড়ে বৃষ্টি পড়ে’ গীতিময় ধারার একটি মনোজ্ঞ কবিতা।

সৈয়দ শামসুল হকের কাব্য-চেতনার প্রধান দিকই হল ঐতিহ্য-সংলগ্নতা। তাঁর সিংহভাগ কবিতা ধারণ করে আছে বাংলাদেশের গৌরবময় ঐতিহ্য, লোকজ আচার, সংস্কৃতি, জাতীয় আন্দোলন-সংগ্রামের বর্ণিল সব অনুষঙ্গ।

এই ধারার উল্লেখযোগ্য কবিতাগুলোর মধ্যে আছে ‘আমার পরিচয়’, ‘বিদিতাকে চিঠি’, ‘বর্ণমালায় শোনো যুদ্ধের ডাক’, ‘ইতিহাসের গান’, ‘সংক্ষেপে আমাদের ইতিহাস’ ও ‘পরিমলদের বাড়ি’। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে গ্রন্থে আছে একাধিক কবিতা।

সৈয়দ শামসুল হকের উপন্যাস

মৃগয়ায় কাল ক্ষেপণ, এক মহিলার ছবি, নিষিদ্ধ লোবান, খেলারাম খেলা যা, নীল দংশন, সীমানা ছারিয়ে, দুরুত্ব, মহাশূন্যে পরাণ মাস্টার, আনন্দের মৃত্যু। বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ।

মৃগয়ায় এক মহিলা নিষিদ্ধ খেলা খেলার সময় নীল সাপের দংশনে মৃত্যুবরণ করে, তাকে সীমানা ছারিয়ে অনেক দূরে মহাশুন্যে আনন্দের সাথে মাটি দেওয়া হল।

সৈয়দ শামসুল হকের কাব্য
একদা এক রাজ্যে, বৈশাখে রচিত পংক্তি মালা, অগ্নি ও জলের কবিতা, পরাণের গহীন ভিতর, শ্রেষ্ঠ কবিতা, নাভিমূলের ভস্মাধার।

একদা এক রাজ্যে বৈশাখের তাপদাহে(অগ্নি) ও জলের অভাবে পরাণ শ্রেষ্ঠের নাভিশ্বাস ওঠার জোগার।

সৈয়দ শামসুল হকের নাটক
গণ নায়ক, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, নুরুলদিনের সারাজীবন, এখানে এখন, ঈর্ষা, যুদ্ধ যুদ্ধ।

গণ নায়কের পায়ের আওয়াজে নুরুলদিনের এখানে এখন ঈর্ষার যুদ্ধ বেঁধেছে।

শিশুতোষ গ্রন্থ : সীমান্তের সিংহাসন।

তাঁর লেখা চিত্রনাট্যে নির্মিত হয় ‘সুতরাং’, ‘কাগজের নৌকা’, ‘মাটির পাহাড়’, ‘তোমার আমার’। তাঁর উপন্যাস ‘নিষিদ্ধ লোবান’ অবলম্বনে ‘গেরিলা’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়।

সৈয়দ শামসুল হক চিত্রনাট্যের পাশাপাশি চলচ্চিত্রের জন্য প্রচুর গান লিখেছেন। তাঁর লেখা বিখ্যাত গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’,’চাঁদের সাথে আমি দেবনা তোমার তুলনা’, ‘তুমি আসবে বলে কাছে ডাকবে বলে’, ‘এই যে আকাশ এই যে বাতাস’।

Add a Comment