সুকান্ত ভট্টাচার্য

সুকান্ত ভট্টাচার্য ৩০শে শ্রাবণ ১৩৩৩ বঙ্গাব্দে(১৫ই আগস্ট, ১৯২৬) কলকাতার কালীঘাটে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা সাহিত্যের মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী এবং প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী তরুণ কবি। তাঁর পৈতৃক নিবাস গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায়। তাঁর পিতা নিবারণচন্দ্র ভট্টাচার্য এবং মাতা সুনীতি দেবী। সুকান্ত বেলেঘাটা দেশবন্ধু স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ধ্বংস ও মৃত্যুর তাণ্ডবলীলা, তেতাল্লিশের মম্বন্তর, ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কিশোর সুকান্তকে দারুণভাবে স্পর্শ করে। এছাড়া সামাজিক নানা অনাচার ও বৈষম্য তাঁকে প্রবলভাবে আলোড়িত করে। তাঁর কবিতায় এই অনাচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ধ্বনিত প্রবল প্রতিবাদ আমাদের সচকিত করে। নিপীড়িত গণমানুষের প্রতি গভীর মমতার প্রকাশ ঘটেছে তাঁর কবিতায়।

১৯৪৪ সালে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। সেই বছর আকাল নামক একটি সংকলনগ্রন্থ তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়।

তাঁর কাব্যগ্রন্থ : ছাড়পত্র, ঘুম নেই, পূর্বাভাস, অভিযান, হরতাল, মিঠেকড়া, গীতিগুচ্ছ ইত্যাদি।

পার্টি ও সংগঠনের কাজে অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে দুরারোগ্য ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ২৯শে বৈশাখ ১৩৫৪ সালে(১৯৪৭ সালের ১৩ মে ) মাত্র একুশ বছর বয়সে কবি মৃত্যুবরণ করেন।

বাংলা কবিতার জগতে তাঁর কবিতার কিছু পঙক্তি বিখ্যাত হয়ে আছে যেমন-

  1. অবাক পৃথিবী অবাক করলে তুমি, জন্মেই দেখি ক্ষদ্ধ স্বদেশ ভূমি।
  2. এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান- ছাড়পত্র।
  3. ক্ষুধার রাজ্য পৃথিবী গদ্যময় পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।
  4. কত গ্রাম কত পথ যায় সরে সরে, শহরে রানার যাবেই পৌঁছে ভোরে। – রানার।
  5. বন্ধু তোমার ছাড় উদ্বেগ, সূতীক্ষ্ণ কর চিত্ত, বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাটি বুঝে নিক দুর্বৃত্ত- উদ্যোগ।
  6. যে শিশু ভুমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে তার মুখে খবর পেলুমঃ সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক- ছাড়পত্র ।
  7. রানার ছুটেছে তাই ঝুমঝুম ঘন্টা রাজছে রাতে রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে- রানার।
  8. হে মহা জীবন, আর এ কাব্য নয়, এবার কঠিন, কঠোর গদ্য আনো – মহাজীবন।
  9. হে সূর্য! শীতের সূর্য! হিমশীতল সুদীর্ঘ রাত তোমার প্রতীক্ষায় আমরা থাকি।
  10. হিমালয় থেকে সুন্দরবন, হঠাৎ বাংলাদেশ কেঁপে কেঁপে ওঠে পদ্মার উচ্ছাসে।।

Add a Comment