সর্বনাম পদ

বিশেষ্যের পরিবর্তে যে শব্দ ব্যবহৃত হয়, তাকে সর্বনাম পদ বলে। সর্বনাম সাধারণত ইতোপূর্বে ব্যবহৃত বিশেষ্যের প্রতিনিধি স্থানীয় শব্দ। যেমন- হস্তী প্রাণিজগতের সর্ববৃহৎ প্রাণী। তার শরীরটি যেন বিরাট এক মাংসের স্তুপ। দ্বিতীয় বাক্যে ‘তার’ শব্দটি প্রথম বাক্যের ‘হস্তী’ বিশেষ্য পদটির প্রতিনিধি স্থানীয় শব্দরূপে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই, ‘তার’ শব্দটি সর্বনাম পদ।

বিশেষ্য পদ অনুক্ত থাকলেও ক্ষেত্রবিশেষে বিশেষ্য পদের পরিবর্তে সর্বনাম পদ ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন— ক. যারা দেশের ডাকে সাড়া দিতে পারে, তারাই তো সত্যিকারের দেশপ্রেমিক। খ. ধান ভানতে যারা শিবের গীত গায়, তারা স্থির লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে না।

সর্বনামের শ্রেণিবিভাগ বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সর্বনামসমূহকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।

(১) ব্যক্তিবাচক বা পুরুষবাচক: আমি, আমরা, তুমি, তোমরা, সে, তারা, তাহারা, তিনি, তাঁরা, এ, এরা, ও, ওরা ইত্যাদি।
(২) আত্মবাচক: সয়ং, নিজে, খোদ, আপনি।
(৩) সামীপ্যবাচক: এ, এই, এরা, ইহারা, ইনি ইত্যাদি।
(৪) দূরত্ববাচক: ঐ, ঐসব।
(৫) সাকুল্যবাচক: সব, সকল, সমুদয়, তাবৎ।
(৬) প্রশ্নবাচক: কে, কি, কী, কোন, কাহার, কার, কিসে?
(৭) অনির্দিষ্টতাজ্ঞাপক: কোন, কেহ, কেউ, কিছু।
(৮) ব্যতিহারিক: আপনা আপনি, নিজে নিজে, আপসে, পরস্পর ইত্যাদি।
(৯) সংযোগজ্ঞাপক: যে, যিনি, যাঁরা, যারা, যাহারা ইত্যাদি।
(১০) অন্যাদিবাচক: অন্য, অপর, পর ইত্যাদি।

সর্বনামের পুরুষ
‘পুরুষ’ একটি পারিভাষিক শব্দ। বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়ারই পুরুষ আছে। বিশেষণ ও অব্যয়ের পুরুষ নেই। ব্যাকরণে পুরুষ তিন প্রকার।
১. উত্তম পুরুষ: স্বয়ং বক্তাই উত্তম পুরুষ। আমি, আমরা, আমাকে, আমাদের ইত্যাদি সর্বনাম শব্দ উত্তম পুরুষ।
২. মধ্যম পুরুষ: প্রত্যক্ষভাবে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি বা শ্রোতাই মধ্যম পুরুষ। তুমি, তোমরা, তোমাকে, তোমাদের, তোমাদিগকে, আপনি, আপনারা, আপনার, আপনাদের প্রভৃতি সর্বনাম শব্দ মধ্যম পুরুষ।
৩. নাম পুরুষ: অনুপস্থিত অথবা পরোক্ষভাবে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীই নাম পুরুষ। সে, তারা, তাহারা, তাদের, তাহাকে, তিনি, তাঁকে, তাঁরা, তাঁদের প্রভৃতি নাম পুরুষ। (সমস্ত বিশেষ্য শব্দই নাম পুরুষ)।