অর্থবাচকতাঃ সমাস শব্দের অর্থ সংক্ষেপ, সমর্থন, সংগ্রহ, মিলন, একাধিক পদের একপদীকরণ। অর্থাৎ দুই বা ততোধিক শব্দকে একটি মাত্র শব্দে পরিণত করে ভাষাকে সংক্ষিপ্ত করে। (২৯, ১১তম বিসিএস প্রিলিমিনারি)

সন্ধি ও সমাসের পার্থক্যঃ সন্ধিতে মিলন ঘটে সন্নিহিত বর্ণের, সমাসে মিলন ঘটে পাশাপাশি থাকা একাধিক পদের। যেমনঃ সংখ্যা+অতীত= সংখ্যাতীত (সন্ধি সাধিত); সংখ্যাকে অতীত= সংখ্যাতীত (সমাস সাধিত), এভাবে একই শব্দ বা পদকে সন্ধিতে আবার সমাসেও ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।

প্রকারভেদঃ সমাস প্রধানত ছয় প্রকার। যথাঃ
১. দ্বন্দ্ব
২. বহুব্রীহি
৩. কর্মধারয়
৪. তৎপুরুষ
৫. দ্বিগু এবং
৬. অব্যয়ীভাব

তবে দ্বিগু সমাসকে অনেক ব্যাকরণবিদ কর্মধারয় সমাসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আবার কেউ কেউ কর্মধারয়কে তৎপুরুষ সমাসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

উল্লিখিত প্রধান ছয়টি সমাস ছাড়াও কয়েকটি অপ্রধান সমাস রয়েছে। প্রাদি, নিত্য, উপপদ ও অলুক সমাস সম্বন্ধে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো। এসব সমাসের প্রচুর উদাহরণ পাওয়া যায় না। এজন্য এগুলোকে অপ্রধান মনে করা হয়।

১. প্রাদি সমাসঃ
প্রাদি=প্র+আদি অর্থাৎ প্র ইত্যাদি। প্র, প্রতি, উৎ(উদ্‌), দুর, অতি, কু, অভি, অনু প্রভৃতি অব্যয়ের সঙ্গে যদি কৃৎ প্রত্যয় সাধিত বিশেষ্যের সমাস হয়, তবে তাকে বলে প্রাদি সমাস।
যথা : প্র (প্রকৃষ্ট ) যে বচন = প্রবচন। এরূপ -পরি (চতুর্দিকে) যে ভ্রমণ = পরিভ্রমণ, অনুতে (পশ্চাতে) যে তাপ =অনুতাপ, প্র (প্রকৃষ্ট রূপে) ভাত (আলোকিত) = প্রভাত, প্র (প্রকৃষ্ট রূপে) গতি = প্রগতি, মানবকে অতিক্রান্ত = অতিমানব, বেলাকে অতিক্রান্ত = উদ্বেল, কুৎসিত যে পুরুষ = কাপুরুষ, কেবল তাহা(তৎ) = তন্মাত্র ইত্যাদি।

২. নিত্যসমাস:
যে সমাসে সমস্যমান পদগুলো নিত্য সমাসবদ্ধ থাকে, ব্যাসবাক্যের দরকার হয় না, তাকে নিত্যসমাস বলে। (২৩তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) তদর্থবাচক ব্যাখ্যামূলক শব্দ বা বাক্যাংশ যোগে এগুলোর অর্থ বিশদ করতে হয়। যেমন- অন্য গ্রাম = গ্রামান্তর, কেবল দর্শন = দর্শনমাত্র, অন্য গৃহ = গৃহান্তর, (বিষাক্ত) কাল (যম) তুল্য (কাল বর্ণের নয়) সাপ = কালসাপ, তুমি আমি ও সে = আমরা, দুই এবং নব্বই = বিরানব্বই।

৩. বাক্যাশ্রয়ী সমাসঃ

যে সমাসে সমাসবদ্ধ পদগুলি একমাত্রায় লেখা হয় না এমনকী সবসময় পদসংযোজক চিহ্ন দ্বারাও যুক্ত করে লেখা হয় না – বিচ্ছিন্নভাবে লিখিত এই সমাসকে বলা হয় বাক্যাশ্রয়ী সমাস।যেমন ; ‘বসে আঁকো প্রতিযোগিতা’, ‘সব পেয়েছির দেশ’, ইত্যাদি ।

৪. সহসুপা বা সুপসুপা
ভিন্ন বিভক্তি যুক্ত দুটি পদের সমাস যে গুলোকে সাধারণত সমাসের কোন শ্রেণীতে ফেলা যায় না তাদেরকে সুপসুপা সমাস বলে। যেমন- মায়ে-ঝিয়ে, এক্ষেত্রে দুটি পদেই একই বিভক্তি(এ) যুক্ত তাই এটি সুপসুপা সমাস নয়। আবার নৌকার ডুবি = নৌকাডুবি, সমস্যমান পদ দুটিতে যথাক্রমে ষষ্ঠী ও শুন্য বিভক্তি থাকলেও এরা সুপসুপা সমাস নয় কেননা, নৌকাডুবি, ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাসের উদাহরণ। যেমন- রাত্রের পূর্ব = পূর্বরাত্র, একটি সহসুপা সমাসের উদাহরণ। লক্ষ করলে দেখা যাবে যে এটি সপ্তমী তৎপুরুষ থেকে আলাদা। কেননা ভূতপূর্ব(পূর্বে ভূত), শ্রুতপূর্ব, অদৃষ্টপূর্ব সব ক্ষেত্রে ‘পূর্ব’ শব্দটি পরে বসেছে।